রুহুল আমিন,জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ:-

 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেম্বারে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে রোগী ও রোগীর স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের ভেদ করে চিকিৎসকদের চেম্বারে

ডাক্তারদের ডিউটির মুহূর্তে রোগী দেখার সময় বিভিন্ন ফ্রি ওষুধের স্যাম্পল সহ আকর্ষণীয় সব গিফট দেওয়া সহ রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলেন। দিনকে দিন বিষয়টি রোগীদের কাছে চরম অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।

 

এমনিতেই যেকোন ডাক্তার দেখানো এক বিশাল যুদ্ধ। তার ওপর ডাক্তারের চেম্বার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভির-আড্ডা বেড়েছে। স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া রোগীরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হতেই পড়তে হয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে। এ নিয়ে নানামুখী ক্ষোভ রোগীদের মধ্যে।

 

প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলায় অস্বস্তিতে পড়া ভুক্তভোগী রোগীরা বলেন, ডাক্তার দেখানোর পরপরই কিছু লোক দাঁড়িয়ে থেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নেয়। তারা বলেন, আমার কোন রোগ আছে বা আমার রোগের ইতিহাস আমি তাদের কেন জানাবো?

 

ভুক্তভোগী রোগীরা আরও বলেন, অনেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে আমাদের রোগ সম্পর্কে জেনে যায় এবং আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। আমরা তাদেরকে আমাদের প্রেসক্রিপশন দেখাতে চাই না, তবুও তারা একেকজন তিন-চার বার করে আমাদের কাছে ছবি তোলার অনুরোধ করে। বিষয়টি কোনও ভাবেই ঠিক নয়।

 

এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে আরেক ভুক্তভোগী রোগী বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। ডাক্তার দেখাতে আমাদের এমনিতেই নানান ঝক্কি পোহাতে হয়। তার ওপর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন কর্মকাণ্ড আমাদের সমস্যা আরও বাড়ায়।

 

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, একজন ডাক্তার যখন রোগীকে দেখেন, তখন রোগীর অনুমতি ছাড়া তার কোনও আত্মীয়ও সেখানে থাকতে পারেন না। রোগীর প্রেসক্রিপশন আইনতই পুরোপুরি কনফিডেনসিয়াল। সুতরাং কেউ কিছুতেই এটির ছবি তুলতে পারেন না।

 

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান এ বিষয়ে বলেন, এ মার্কেটিং পলিসি সামাজিক ব্যাধির পর্যায়ে চলে গেছে। এটা দুর্বৃত্তায়ন। ছবি তুলে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য বাইরে নিয়ে আসার এমন চর্চা ভারতেও ছিলো। ভারত এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিলের মাধ্যমে একটা রেগুলেশনের মধ্যে নিয়ে এসেছে।

 

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশের একটি সময়সিমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া কর্তব্যরত ডাক্তারদের তারা ভিজিট করতে পারবেনা। উক্ত বিষয়টি প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!