মোঃ হেকমত আলী মন্ডল জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বিয়ের

দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে বসেছে সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) দন্ডপাল ইউনিয়নের লোহাগাড়ায় অনুমানিক বিকাল সাড়ে তিনটায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিক বিষ্ণু রায়ের বাড়িতে অনশন করেন দশম শ্রেণির ঐ শিক্ষার্থী। অনশনে বসা শিক্ষার্থীর অভিযোগ গত তিন বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ান উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের লোহাগাড়া এলাকার সুরেন রায় (ডাংগি) ছেলে বিষ্ণু রায় (রাম বাবু)।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে বিষ্ণু রায়ের বাড়ি থেকে বিষ্ণু রায় সহ তার পরিবারের সকল সদস্য বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল, কথা বলেন মেয়েটির সাথে।

এদিকে মধ্যরাতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বৈঠক বসানোর ব্যবস্থা করেন দন্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেপাল,সাবেক
দন্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস ও ইউপি সদস্য বাবুল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যগণ। বৈঠকের ছেলে উপস্থিত না থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বৈঠকে থাকা ব্যক্তিবর্গ।

বৈঠকে ছেলের বাবা সুরেন রায় (ডাংগি) বলেন, “আমি আমার ছেলেকে হাজির করবো তারপর আবার বসবো আপনাদের সাথে।”

এমতাবস্থায় বৈঠকে থাকা ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেন পরের দিন বসার। এছাড়া শীতের রাত বলে মেয়েটিকে পাশ্ববর্তী দিগেন মাস্টারের বাড়িতে রাত্রি যাপনের জন্য রাখা হয়।

এদিকে পরদিন ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দুই পরিবারকে সুবাসের বাড়িতে বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে দুই পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত না মানায় সেদিনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বৈঠকে থাকা ব্যক্তিবর্গ। সেদিন রাতেও প্রেমিকের বাড়ির পাশের বাড়িতে রাখা হয় মেয়েটিকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়,বৈঠকের নেতাদের মধ্যস্ততায় মেয়েটিকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মেয়েকে অনশন ভেঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। মেয়েটি ফিরে যাবে তার নিজ বাড়িতে বিনিময় পাবে চার লক্ষ টাকা। এদিকে দর কষাঘষি উঠে দশ লক্ষ টাকায়, বাকি টাকা কোথায় যাবে এখনো জানা যায়নি। তবে অভিযোগ উঠেছে ছেলের পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করেন দণ্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেপাল রায়।

এঘটনায় মেয়ের বাবা তারাবদো রায় বলেন, “আমাকে নেতাদের মাধ্যমে চার লক্ষ টাকা দিতে চায় এবং আমার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চায়। আমি টাকা নিবো না কিন্তু আমি অনেক চাপে আছি। আমি কি করবো তা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। নেতাদের কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নেতারা কি করতেছ আমি একটু দেখি। আপনার আমার পাশে থাকেন আমি যেনো সঠিক বিচার পাই।”

মেয়েটির দূর সম্পর্কের দাদা কাশীরাম রায় বলেন, “আমরা মেয়েটিকে ওই বাড়িতে বিয়ে দিতে চাই। যেহেতু মেয়েটির সাথে ছেলেটির সম্পর্ক ছিল এবং তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে তাই বাড়াবাড়ি না করে বিয়ে দিতে চাই কিন্তু নেতা নেপাল বাড়াবাড়ি করতেছে । ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন নেপাল,তাই নেপাল এই খেলা শুরু করেছে এ খেলা কোথায় শেষ হবে তা আমরা জানিনা তবে আমরা দেখতে চাই কে কত খেলতে পারে।”

অন্যদিকে ছেলের চাচা হরিপদ রায় বলেন,
“এবিষয়টি অনেক দিনের, আমরা চাই বিষয়টাকে বাড়াবাড়ি না করার জন্য। আমরা মেয়ের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলাম গত ১০-১৫ দিন আগে। মেয়ের পরিবার তাতে রাজি হয়নি, আজ এই মেয়ে আমার ভাতিজার বাসায় এসেছে বিয়ের দাবিতে। আমরা এখন কি করবো, নেতাদের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।”

এবিষয়ে দন্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেপাল রায় বলেন, “মেয়েকে অনশন ভেঙ্গে বাসায় ফিরতে হবে টুডে এন্ড টুমরো। এতে হয়তো কিছু টাকা পাবে, তা না হলে মেয়েকে আইনের মাধ্যমে এ ছেলের বাসায় আসতে হবে। মেয়ের বয়স কম, মেয়ে আর কি করতে পারবে।”

টাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নেপাল রায় বলেন, “এই বিষয়গুলোতে তো টাকা পয়সা লেনদেন হবেই।”

দন্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সুবাস রায় বলেন, “আমি খুব চেষ্টা করতেছি মেয়েটি যেনো সঠিক বিচার পায়। দুই পরিবারের সাথে বসে সিদ্ধান্ত যেটা হবে, সেই সিদ্ধান্তেই আমরা কাজ করবো।”

দণ্ডপাল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল বলেন, “আমি সুবাসের বাড়ির বৈঠকে সুবাসের ও মেয়ের পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছি মেয়েটিকে। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই সম্পূর্ণ ঘটনার জন্য দায়ী মেয়ের দূর সম্পর্কে দাদা সাবেক চৌকিদার কাশীরাম রায়। টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি জানিনা এবং আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।”

উপজেলার ৫ নং সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক,মো: শাহিনের মোবাইলে কল করলে তার মোবাইলটি রিসিভ হয়নি।

এদিকে দন্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আজগর আলী বলেন, “আমি এ বিষয়ে শুনেছি, মেয়েটির বয়স কম তাই আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ বিষয় জানে। তবে অপরাধ হলে অপরাধী শাস্তি হোক তা আমি চাই।”

এঘটনায় দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইত্তেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, “এবিষয়ে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।”

বর্তমান মেয়েটি বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর)সকাল ১১ টা থেকে দণ্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুবাসের বাড়িতে অবস্থান করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে সুবাসের বাড়ীতে বৈঠকে বসে দুই পরিবার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সমাধান হয়নি বলে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!