খ ম সাইফুল হাবিব সজিব (স্টাফ রিপোর্টার) :

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে আমাদের সকলের সহায়তা করা উচিত। রাজনীতি থেকে হিংসা-হানাহানি অবসানের মাধ্যমে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আবদুল হামিদ বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে। দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে যায়। আবার গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। গণতন্ত্রহীন অবস্থায় যে উন্নয়ন হয় তা কখনো সার্বজনীন হতে পারে না। সে উন্নয়ন হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রি।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীলতা এবং দৈনন্দিন নাগরিক জীবনের জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সংসদ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণ আশা করে। সমাজের সকল স্তরের নাগরিক, বিভিন্ন গোষ্ঠী, দল, সংগঠনের চাওয়া-পাওয়া ও স্বার্থকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমন্বয়সাধন করতে হয় জাতীয় সংসদকে। সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারা অনেক আশা নিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছেন যাতে তাদের কথা, চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা আপনারা সংসদে তুলে ধরেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং নীতি-আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা থাকতে পারে না। তাই আপনাদের প্রতি আমার আকুল আহ্বান সংসদকে কার্যকর করতে ঐক্যবদ্ধ হন। আমাদের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জাতীয় সংসদে সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এটি অর্জনে আমাদের সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।

তিনি বলেন, দুনিয়ার পার্লামেন্টারি কনভেনশনে যেসব নীতিমালা আছে, সেগুলো আমরা মেনে চলতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে যেন এমন একটি পার্লামেন্টারি প্রসিডিওর ফলো করতে পারি, যাতে দুনিয়া আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এখানে কোনো দল বা মতের নয়, এখানে এই দেখব যে, প্রত্যেক সদস্য যেন যার যে অধিকার আছে, সে অধিকার ব্যবহার করতে পারেন। সেদিকে আপনিও খেয়াল রাখবেন বলে আমি আশা পোষণ করি। এ সম্পর্কে আপনি আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।
তিনি বলেন, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার অনেক সময় বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। ১৯৭৩ সালে পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন এবং বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। এটা ছিল বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর একটি গণতান্ত্রিক কৌশল। রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের নেতাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। আসলে রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও পরমত সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। সংসদে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সমর্থন ও মতামতের উপর নির্ভরশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ‘নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠা করা সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দক্ষ ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা সংসদকে অধিক কার্যকর করে যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক জনকল্যাণকেও নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রেও একজন সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগতভাবে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে সন্নিবেশিত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সংসদের নিকট সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেন।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়। মনে চাইল কোনো দেশ থেকে পরিমাণমত গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করলাম, বিষয়টি এমন নয়। চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদের কার্যবাহে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যগুলো পড়লে বুঝা যায় সংসদকে কীভাবে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হয়।

তিনি বলেন, পরমতসহিষ্ণুতা, বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া এবং অন্যকে কীভাবে সম্মান দেওয়া যায় এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় নজির রেখে গেছেন। আমাদের সৌভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বমানের ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!