সোহেল রানা বাগমারা প্রতিনিধি


রাজশাহী জেলার অন্তর্গত বাগমারা উপজেলাধীনে ২ নম্বর নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার আবুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি,জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের প্রতিবাদে হাতিয়ার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সদস্য ও সাধারণ কৃষকেরা আজ মানববন্ধন করেছেন।

উপজেলার দুই নম্বর নরদাশ ইউনিয়নের সুজন পালশা গ্রামের হাতিয়ার বিলের পাশের রাস্তায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে হাতিয়ার বিলের আশেপাশের ছয়টি গ্রামের শত শত কৃষক উপস্থিত থেকে গোলাম সারওয়ার আবুলের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানায় এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

মৎস্য চাষীদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন যাবত নির্বিঘ্নে এই মৎস্য চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু আবুল চেয়ারম্যান তার নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য কতিপয় মৎস্য চাষীদের উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি,২০২৩ ইং বুধবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে চন্ডিপুর গ্রামের মোঃ আক্কাস আলী বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান কিছু দুষ্কৃতিকারীর মাধ্যমে মাছ চাষীদের ওপর অন্যায় ভাবে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছিল। তার কাঙ্খিত পরিমাণ সেই চাঁদা না পাওয়ায় কিছু কৃষককে দিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালাচ্ছে। মানববন্ধনে কৃষকদের মধ্যে উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য প্রদান করেন, রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু মোঃ আফজাল হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে অত্র এলাকার নারী পুরুষেরা একত্রিত হয়ে চেয়ারম্যান আবুলের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই। তাঁরা বলেন, এই বিশৃঙ্খল পরিবেশের জন্য একমাত্র চেয়ারম্যানই দায়ী, চেয়ারম্যান যেখানে এলাকার শান্তি স্থাপন করবেন উল্টো সেখানে তার স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় সাধারণ কৃষকদের মাঝে সংঘর্ষের উস্কানি দানে সে ব্যস্ত।

উল্লেখ্য যে, রাজশাহীর বাগমারায় ২নং নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের মৎস্য চাষীদের মারধরের অভিযোগে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে নরদাশ গ্রামের মৎস্য চাষী জোনাব আলী (৪৪), কর্মচারী বেলাল হোসেন (৩৮), আবেদ আলী (২৬), বাবুল হোসেন (৪০) ও জোনাব আলী (৩৫) কে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এই নিয়ে পূর্বের মাছ চাষীরা আদালতে মামলা করেছে বলে জানা গেছে। মামলায় চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার আবুলকে প্রধান আসামি করে মোট ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন প্রকল্পের সম্পাদক মোঃ আব্দুল মতিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের চারিধারের ছয়টি গ্রামের প্রায় ৬ থেকে ৭শ জমির মালিকেরা মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। প্রায় মাস খানেক পূর্বে মাছ চাষীদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে জমি লীজের টাকা বাড়ানোর দাবী জানান। সেই মোতাবেক মৎস্যচাষীরা ১৩ হাজার টাকা বিঘা থেকে বাড়িয়ে প্রতি বিঘা ২০ হাজার টাকা দিয়ে মাছ চাষের জন্য মোখিক চুক্তিবদ্ধ হন।

ওই মোতাবেক বিলের অধিকাংশ জমির মালিকেরা জমির লীজের টাকা নিয়ে যান। কিন্তু বাইগাছা গ্রামের ১০-১৫ জন জমির মালিককে দিয়ে চেয়ারম্যান উস্কানি দিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার ১ ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মৎস্য চাষী জোনাব আলী বিলের কর্মচারী বেলাল হোসেন ও আবেদ আলী মাধনগর গ্রামের দীঘিতে মাছ দেখতে গেলে বিলের পূর্বের মৎস্য চাষীদের মধ্যে বিদ্রোহীকারী, মজিবুর রহমান, জোনাব আলী, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে তাদের উপর আক্রমন করে। খবর পেয়ে বিলের অন্যান্য মৎস্যচাষীরা মাধনগরে ছুটে যান এবং দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

মৎস্যচাষী হাতিয়ার বিলের সাধারন সম্পাদক সুজনপালশা গ্রামের আব্দুল মতিন জানান, ২০০৯ সাল থেকে হাতিয়ার বিলের চারধারের ৬শ থেকে ৭শ সদস্য নিয়ে মাছ চাষ করে আসছি। কোন ধরনের ঝামেলা ছিল না। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার আবুল ত্রিশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।তাকে এই চাঁদা না দেয়ায় তিনি মৎস্য চাষীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। যার কারনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

বিলের জমির মালিকদের ১৩ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। যাতে কোন ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি না হয়। অথচ গুটি কয়েক লোকজন নিয়ে আবুল চেয়ারম্যান বিলের শত শত মৎস্যচাষীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর চেষ্টা করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

অপর দিকে ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার আবুল জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিস্পত্তির চেষ্টা করেছি। একটি পক্ষ না আসায় আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জমা দিয়েছি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, বিল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এক পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!