তানজিল মাহমুদ হিমেল
টংগী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মিরাজুর রহমান রায়হান কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক রাকিব নামের এক শিক্ষার্থী।

ঘটনার কিছুদিন পূর্বে রাকিবকে একটি পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অভিযুক্ত মিরাজুর রহমান রায়হান। পরবর্তীতে, ঐ ঘটনার জের ধরেই গত ২২ মার্চ ২০২৩ আনুমানিক বিকাল ৩টা রাকিবকে কৌশলে টঙ্গীর শফিউদ্দিন সরকার স্কুল মাঠে ডেকে পাঠায় ছাত্রলীগের টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক পদধারী মিরাজ। রাকিব সেখানে উপস্থিত হলে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া মিরাজের অনুসারী ১৫/২০ জনের একটি কিশোর দল রাকিবকে ঘিরে ফেলে এবং তাকে জোরপূর্বক টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত মিরাজ এর নির্দেশে ও নেতৃত্বে ছাত্র সংসদ তালাবদ্ধ করে রাকিবকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং একপর্যায়ে লোহার রড, কাঠের লাঠি ও চেয়ার দিয়ে বেধরক পেটানো হয়। এতে রাকিবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজুর রহমান রায়হানের সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অছাত্র হয়েও টংগী সরকারি কলেজের ছাত্র পরিচয় দেওয়া মিরাজ এর রেজিষ্ট্রেশন কার্ড মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। তবুও গত বছরের ডিসেম্বরে ঘোষণা হওয়া টংগী সরকারি কলেজের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম-আহবায়কের পদ পায় মিরাজ। এর আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ। টংগী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ এর সাবেক অধ্যক্ষ আশরাফ ইসলামের ছেলে তানসিমকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছিলো তার বিরুদ্ধে। গতবছর, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে টংগী সরকারি কলেজের ডিগ্রী তৎকালীন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী স্বাধীনকেও দলবল নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে মারধর করে গুরুতরভাবে আহত করে এই মিরাজুর রহমান রায়হান। মূলত, টঙ্গী সরকারি কলেজ এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার এবং প্রাপ্ত দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেশ কয়েকবার মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে মিরাজুর রহমান রাহয়ান। টঙ্গী সরকারি কলেজ বেশ কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় তার উগ্র মনোভাবসম্পন্ন চলাফেরা, শিক্ষার্থীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং প্রাপ্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি। ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক ধারা চর্চাকেন্দ্র এবং ছাত্র অধিকার রক্ষার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ, সেই ছাত্রসংসদে নামধারী এই ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থী রাকিবের মারধরের ঘটনার স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক সমাজ এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার সংগঠিত হওয়ার ৪৮ ঘন্টা ও থানায় অভিযোগ দেওয়ার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও সদর্পে টংগী কলেজ গেইট এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত মিরাজ ও বাকী অপরাধীরা। টংগী সরকারি কলেজ প্রশাসন, টংগী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ ও টংগী পশ্চিম থানা কর্তৃপক্ষ থেকে অভিযুক্ত মিরাজুর রহমান রায়হানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজ, টংগী সরকারি কলেজ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টংগী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ ও সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ছাত্র সংসদের মতো একটি নিরাপদ জায়গায় ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহাসিক ও গৌরবময় ছাত্রসংগঠনের একজন যুগ্ম-আহবায়ক পদধারী মিরাজুর রহমান রায়হানের কর্তৃক ছাত্র মারধরের ঘটনার তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা দাবী তুলেছেন অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!