স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার মিরপুরে সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আতাহার আলীর লাইসেন্সকৃত পিস্তলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রেজাউল (৫০) ও হাসেম গাজী (৫৫) নামের দুইজন মারাত্মক জখম হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় মিরপুর উপজেলার শিমুলিয়া কালি মন্দির সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ আহত রেজাউল (৫০) মিরপুর বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যানচালক এবং হাসেম গাজী (৫৫) একই উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন গাজীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক।
অভিযুক্ত আতাহার আলী মিরপুর উপজেলার শিমুলিয়া (মিরপুর বর্ডার গার্ড ক্যান্টিন সংলগ্ন) এলাকার মৃত মনোহার বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক।তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে সাধারন জনগনকে হুমকি ধামকি দেওয়া সহ গুলি করার অভিযোগও রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাপস কুমার সরকার জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রতক্ষ্যদর্শী সুত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় লোক দিয়ে বাড়ি থেকে হাসেম গাজীকে ডেকে এনে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে কথাকাটাকাটির এক পযার্য়ে নিজের নামে লাইসেন্সকৃত অস্ত্রদিয়ে গুলি করে সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী। এসময় সেখানে থাকা পাখিভ্যান চালকও তার ছোড়া গুলিতে আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে।
গুলিবিদ্ধ আহত হাসেম গাজীর ভাই আলেক গাজী বলেন, আমরা চাষী মানুষ আমরা চাষবাস করে খাই। আতাহার চেয়ারম্যান বহুদিন ধরে আমাদের শত্রু। তিনি আমাদের জমি জায়গা দখল করে রাখে। আমার বাবার জায়গার ভিতরে উনি বাড়ি করে আছে। রাত আটটার দিকে আতাহার ষড়যন্ত্র করে লোকজন নিয়ে দোকানের উপরে বসে ছিলো। আমার এক চাচাতো ভাইকে দিয়ে মার শুরু করে। তখন আমার লোকজন ছুটে আসে তখন আতাহার ধামধাম করে গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে লোকজন ছুটে পালিয়ে যায়। তখন আমার হাশেম ভাই আমার সাথে যাওয়ার সময় আতাহার এসে তাকে গুলি করে দেয়। আতাহার এর আগেও লোক মেরেছে আমাদের গ্রামে। দুটো লোক মেরে ফেলেছে। আমার গ্রাম গরিব মানুষের গ্রাম চাষী মানুষ আতাহারের ভয়তে কেউ কিছু বলতে পারেনা। সে বহুত রকম খারাপ লোক। উনার ফাঁসি চাই আমি। আহত হাসেম গাজির নাতি ছেলে পারভেজ বলেন , গত সংসদ নির্বাচনে আমরা ট্রাকের ভোট করছিলাম আর আতাহার নৌকার ভোট করছিলো (জাসদ ইনুর) ভোট। আমরা কামরুলের ভোট করছি। ওই থেকেই তার ক্ষোভ। আমার কেন ভোট করল না। আমার সাথে একসাথে হয়ে কেনো ভোট করল না। এই কারণেই তিনি (আতাহার) আমাদের অনেক হুমকি ধামকি দেয়।তোদের মেরে দেবো , এই গ্রামের রাস্তা আমার বাপের। তোরা এই রাস্তাতে চলতে পারবি না তোদের ঠ্যাং কেটে নেবো। এরকম ধরনের কথা বলে। আমরা ঈদের জামাতে গেছিলাম ওই জায়গাতেও আমাদের নাম ধরে ধরে আমাদের হুমকি দিছে। আজকের রাতটা যাক কালকে তোদের হবে। তারপর ঈদের দিন রাতে আমাদের বাসায় তিনটা বোম মারে। বোম মারার পরে এটা এমপি কে জানানো হয়। তারপর আজকে আমরা আমাদের গ্রামে একটি টং চায়ের দোকান ওই জায়গাতে আমরা চা খাচ্ছিলাম উনার প্রথমে ছেলে আসে তারপর ঘুরে চলে যায়। তারপর ওদের ৭-৮ টা মোটরসাইকেল নিয়ে আসে। এসে আমাদেরকে ঘিরে ধরে প্রথমে একটা উড়ো ফায়ার করে। আমরা যে যেই দিক দিয়ে পারি দৌড় মারি। তখন আমার নানা পাশ দিয়ে পালায় যাচ্ছিলো তখন আমার নানার পিছন দিয়ে সামনে গিয়ে বুকে গুলি করে আতাহার চেয়ারম্যান। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ঘটনায় মিরপুর থানা পুলিশ ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী ও আয়নাল নামেত দুইজন‌কে আটক করেছে। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!