নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

‘উপস্থিত ইলিশ নাই। মাছ ছিল ৩০-৩৫ কেজি। বেচি হয়া গেইছে। আইজ সকালে থানায় দিছি ৫ কেজি। মণ্ডলের হাটের এক এনজিও ম্যানেজার রাইতে নিয়া গেইছে ২০ কেজি। সন্ধ্যায় মাছ হইলে দিতে পারব।’ ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ এই সময়ের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রামের উলিপুরের এক মাছ বিক্রেতার কাছে ক্রেতা সেজে ইলিশ কিনতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।

তাঁর দাবি, প্রশাসন থেকে পুলিশের লোকজন—সবাই ইলিশ কিনছেন।জেলেদের থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে বিক্রি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সেদিন এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার, ভূমি) স্যার আসছিল। দুই একটা মাছ দিতে বলছিল।

আমি বলছি, স্যার ঘরত তালা লাগাইছেন, মাছ দেই কোটাই থাকি। উনি বলছেন, আরে একদিন দাবরে যাই (অভিযান) ১৫ দিনেই মারেন। পরে তাঁর গাড়ির ড্রাইভার মাছ নিয়া গেছে।’

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, কেনাবেচা, বিনিময় ও মজুত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কুড়িগ্রামের ছয় উপজেলার (সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) নদ-নদী ইলিশ অঞ্চলের আওতাভুক্ত। উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশ শিকার বন্ধ থাকলে তখন জেলার নদ-নদীতে কিছু ইলিশের দেখা মেলে। মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে জেলার তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার দুস্থ জেলেকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে সরকার।

উলিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদে ইলিশ শিকার করা এক জেলে বলেন, ‘মাছ কম ধরা পড়তাছে। সারা দিন মিলি ৫-৭ কেজি মাছ মেলে। প্রত্যেকটার ওজন ৯০০ থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম। কাইল থাকি পানি কমি যাওয়ায় আইজ একটু মাছ কম। বিকেলে হয়তো আরও পাওয়া যাইবে।’ আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

মাছ কিনতে চাইলে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের আরেক ইলিশ বিক্রেতা শ্যামল বলেন, ‘মাছ আছে। ৭-৮ কেজি দেওয়া যাবে। বিকেলে আসলে ১০ কেজিও দেওয়া যাবে।’

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরোনো অনন্তপুর বাজার ঘুরে আসা এক মৌসুমি ইলিশ ব্যবসায়ী বলেন, ‘নদীতে পেশাদার জেলে কম। যাদের টাকা আছে, তারা নৌকা আর জাল কিনে দৈনিক পারিশ্রমিক হারে লোক নিয়োগ করে ইলিশ শিকার করছে। সেই ইলিশ ঘাটের কাছে বাজারে এনে ফ্রিজে রেখে বিক্রি চলছে। সকাল-সন্ধ্যা ইলিশে ভরপুর ব্রহ্মপুত্রের ঘাট।’

মাছ কিনছেন কারা? এমন প্রশ্নে ওই মৌসুমি ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রশাসনের লোক থেকে শুরু করে পুলিশ, সাংবাদিক এবং সামর্থ্যবান অনেকেই ইলিশ কিনছেন।’

পুলিশের ইলিশ কেনার বিষয়ে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কোনো অফিসার কিনেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাকে জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। একজন অফিসার যদি মাত্র ২২ দিন ইলিশ মাছের লোভ সামলাতে না পারেন, তাহলে কেমন করে হবে। আমি সবাইকে বিষয়টি জানায় দিচ্ছি, যেন কোনো অফিসার ইলিশ না কেনেন।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমান ব্রহ্মপুত্র এলাকায় অভিযানে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের পর এমন অভিযানে যাইনি। ইলিশ কেনার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

উলিপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিফুর রহমান সরকার বলেন, ‘অভিযান চলছে। আমরা নৌ পুলিশ নিয়ে অভিযান করেছি। মোবাইল কোর্টসহ আরও অভিযান চলবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!