নিউজ ডেস্কঃ

গৃহবধূ জিন্নাতুন আরা কালীগ্রাম থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন ওয়ারিশান সনদ নেওয়ার জন্য। নিয়ম মেনে পরিষদের নির্ধারিত ফরমে আবেদনও করেন। সেই আবেদনপত্র নিয়ে মেম্বারের কাছে গিয়ে স্বাক্ষর পাননি। মেম্বারের স্বাক্ষর না থাকায় চেয়ারম্যানও তাতে স্বাক্ষর দিতে রাজি নন। অগত্যা খালি হাতেই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
গৃহবধূ জিন্নাতুন আরা বলেন, ওয়ারিশান সনদ ছাড়া জমির নামজারীর আবেদন করতে পারছেন না। গত কয়েকদিন ধরে এখানে ওখানে ঘুরছেন। এ কাজে প্রতিদিন পরিষদে যাতায়াত করতে তাকে ভ্যানভাড়া গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।
সেবাপ্রার্থী কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে কৃষি ঋণ নিতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক জোতবাজার শাখা হতে আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন। সেই ফরমে চেয়ারম্যানসহ দুইজন মেম্বারের স্বাক্ষর প্রয়োজন। কিস্তু ৪-৫ দিন ধরে ঘুরেও তাতে মেম্বারদের স্বাক্ষর পাননি। এতে তিনি বেকায়দায় আছেন।
শুধু গৃহবধূ জিন্নাতুন আরা ও কৃষক নজরুল ইসলাম নন প্রতিদিন এভাবে অন্তত ৫০ জন সেবাপ্রার্থী কাজ করতে না পেরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে নওগাঁর মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে। অনিময়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী প্রামাণিকের বিরুদ্ধে গত ২ জানুয়ারি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন পরিষদের ১০ জন সদস্য।
এর পর থেকে সব ধরণের কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন অনাস্থা প্রস্তাবকারী ইউপি সদস্যরা। এতে পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইউনিয়নের সেবাপ্রার্থীরা।
পরিষদের সদস্য আবু সাঈদ জালাল চঞ্চল বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, ভিডব্লিউবি’র কার্ড করে দেওয়ার নামে হতদরিদ্র নারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদে অতিরিক্ত ফি আদায়, ভিজিএফ ও টিসিবিতে অনিয়ম, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিবি, হাটউন্নয়ন খাত, বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতির কাছ থেকে কমিশনের মাধ্যমে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী প্রামাণিক।
ইউপি সদস্য চঞ্চল আরও বলেন, সদস্যদের সঙ্গে মতনৈক্য ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ইউনিয়নের ১০ জন সদস্য চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করেছে। ঘটনার তদন্তসহ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী প্রামাণিক বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে ইউপি সদস্যরা বেশকিছু কাগজপত্র তৈরি করে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন। বিষয়গুলো তদন্ত করলেই সত্য-মিথ্যা যাচাই হবে।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইউপি সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে বাড়াবাড়ি করছেন। তাদের সঙ্গে বারবার সমন্বয় করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমার আর কিছুই বলার নেই।’

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার নওগাঁর উপপরিচালক (ডিডিএলজি) উত্তম কুমার রায় বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ মান্দার ইউএনও বরাবর করা হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!