সাব্বির মির্জা স্টাফ রিপোর্টার

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিলাঞ্চল থেকে বর্ষার পানি এখনো নেমে যায়নি। তাই বিলপাড়ের মানুষ মাছ ধরার পাশাপাশি বিলের বিভিন্ন অংশে জাল দিয়ে তুলছে শামুক। শামুকের পাশাপাশি উঠছে জলজ উদ্ভিদ। এসব শামুক হাঁসের ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত বস্তা শামুক বিক্রি করা হচ্ছে।

অপরদিকে শামুক নিধনের ফলে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে বিলাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া বিলাঞ্চলের জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনা।

বিলাঞ্চলে ২ মাস ধরে শামুক নিধনের মহোৎসব চলছে জানিয়ে স্থানীয় আসাদুল ইসলাম বলেন, খেটেখাওয়া মানুষ বাড়তি উপার্জনের আশায় প্রতিদিন নৌকা নিয়ে বিলের বিভিন্ন অংশে ডুবে থাকা ফসলি জমি থেকে মই জাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা নৌকাভর্তি শামুক বিক্রির জন্য উপজেলার দীঘি সগুনাবাজার, হামকুড়িয়াবাজার, মান্নাননগর চৌরাস্তাবাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা শামুক কিনে বিভিন্ন হাঁসের খামার ও মাছের ঘেরে বিক্রির জন্য নিয়ে যান।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয়রা বিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০-৩৫টি নৌকায় করে শামুক নিয়ে আসে দীঘিসগুনা সড়কে। এরপর তারা বস্তাপ্রতি শামুক ১১০-১২০ টাকায় ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করছেন।

শামুক সংগ্রহকারী তাড়াশের বিলনাদো গ্রামের আব্দুর রহমান প্রামাণিক বলেন, বর্ষায় বিলাঞ্চলে মানুষের কাজকর্ম তেমন একটা থাকে না। তাই নৌকায় করে মই জাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন। এসব শামুক ব্যাপারীদের কাছে বস্তাপ্রতি ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

শামুক ব্যাপারী কামারশোন গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, প্রতি বস্তা শামুক ১২০-১৫০ টাকা দরে কিনে এলাকার বিভিন্ন হাঁসের খামার ও ঘের-মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন দীঘিসগুনায় শামুক বিক্রির আড়ত থেকে ৩০০-৩৫০ বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার হাঁসের খামারি আব্দুল জলিল বলেন, এ মৌসুমে প্রতিবছর বিল এলাকা থেকে হাঁসের খাবারের জন্য শামুক কিনে আনা হয়। শামুক হাঁসের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনা বলেন, বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শামুকগুলো বেশির ভাগ মারা যাওয়ায় কৃষিজমির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কিন্তু শামুক নিধন প্রতিরোধে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এরপরও বিষয়টি দেখা হবে।

সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল গফুর  বলেন, শামুক নিধন প্রতিরোধে তাদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করা হবে। এমনিতেই শামুক নিধন বেশি মাত্রায় করায় হুমকিতে পড়েছে বিলাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!