আমির হোসেন,
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় আব্দুল মন্নান (৬৫) নামের এক নিরীহ কৃষকের ৩০ শতক জমির কাঁচা ধান রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষ সিরাজ বাহিনীর লোকজন এমন অভিযোগ উঠেছে।
কৃষক আব্দুল মন্নানের সাথে একই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রজনী লাইন গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে সিরাজ মিয়া(৫০) এর জমি সংক্রান্ত জেরে ধরে গত (১৯ নভেম্বর) শনিবার ভোর রাতে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আমতৈল গ্রামের পূর্ব পাশের পচাসুল হাওর থেকে ওই ৩০ শতক জমির কাঁচা আমন ধান কেটে নিয়েছে যায় ভূমিখেকো সিরাজ অরোপে সিরু মেম্বারের লাঠিয়াল বাহিনী ।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রাতে কৃষক আব্দুল মন্নানের ছেলে সাজ্জাত নুর রহমান(৩০) বাদী হয়ে রজনী লাইন গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে সিরাজ মিয়া(৫০), তার ছেলে আলী নুর(৩০), আমতৈল গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে আমির আলী(৩৬), জাকির হোসেন(৩০), দিলোয়ার(২৬), আনোয়ার হোসেন(২২), মনির হোসেন(২১), আজমান মিয়া(২০) এর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে তাহিরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, একই ইউনিয়নের পুরানঘাট গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের কাছ থেকে তাহিরপুর উপজেলার শান্তিপুর মৌজাস্থ জেএল নং-১২৮, খতিয়ান-১৯ ও ১৫৮ নং দাগের মোট ৩০ শতাংশ আমন ভূমি ১৯৯৫ সালে ৪০০/৯৫ নং দলিল মূলে ক্র‍য় সূত্রে প্রায় ২৭ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন কৃষক আব্দুল মন্নান। কিন্তু হঠাৎ করেই ভূমিখেকো সিজার মিয়া গত ৫/৬ মাস পূর্ব থেকে ওই জমি তার দাবি করে নিরীহ কৃষক আব্দুল মন্নানসহ তার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে জমি দখলের পায়তারা করছে। এরই জের ধরে গত ১৬ আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে ভূমিখেকো সিরাজ মিয়া তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক ওই জমি দখলের চেষ্টা করলে এসময় কৃষক আব্দুল মন্নান ও তার পরিবারের লোকজন বাঁধা দিতে গেলে আব্দুল মন্নান ও তার ছেলে সাজ্জাত নুরকে পাঠিয়ে গুরুতর আহত করে সিরাজ বাহিনীর লোকজন। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিচার শালিসের মাধ্যমে ভূমিখেকো সিরাজ মিয়াকে আর কোন দিন কৃষক আব্দুল মন্নানের জমিতে মালিকানা দাবি না করার শর্তে তাদের দুজনের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেয়। বিচার শালিসের পর কৃষক আব্দুল মন্নান তার ভোগদখলিয় ৩০ শতক জমিতে আমন ধান রোপণ করে। কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর শনিবার ভোর রাতে ভূমিখেকো সিরাজ মিয়া তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে কৃষক আব্দুল মন্নানের লাগানো ৩০ শতক জমির কাঁচা আমন ধান কেটে বাড়িতে নিয়েছে যায়। এসময় খবর পেয়ে কৃষক আব্দুল মন্নান ও তার ছেলে সাজ্জাত তাদের বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকেও মারপিট করে আহত করে ভূমিখেকো সিরাজ মিয়া তার লাঠিয়াল বাহিনী।
পরে এবিষয়ে আব্দুল মন্নানের ছেলে সাজ্জাত নুর রহমান বাদি হয়ে গত ১৯ নভেম্বর রাতে সিরাজ মিয়াসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪/৫ জনের নাম অজ্ঞাত করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

কৃষক আব্দুল মন্নান কান্না জড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে সংবাদকে বলেন, পুরানঘাট গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের কাছে থেকে ১৯৯৫ সালে ৩০ শতাংশ জমি টাকা দিয়ে কিনে বৈধভাবে ২৭ বছর ধরে ভোগদখল করতাছি। সিরু মিয়( সিরাজ মিয়া) গত ৫/৬ মাসভআগ থাইকা ২০১২ সালের একটি জাল দলিল করেপ্প দলিলের মাধ্যমে আমার বৈধ জমি জোরপূর্বক দখলের পায়তারা করছে। এবং হুমকি ধামকি সহ কয়েকবার আমি ও আমার ছেলেরা উপর হামলাও চালিয়েছে সিরুর লাঠিয়াল বাহিনী। এ নিয়ে সিরু(সিরাজ মিয়া) ভূয়া জমির মালিক আব্দুল গফুর বানিয়ে আদালতে একটি মামলাও করে। এই মামলার রায়ও আমি পাই। এর পরেও আদালতে রায় অমান্য করে জমি দখলের চেষ্টা করলে নিরুপমা হয়ে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে আমি( আব্দুল মন্নান) একটি আবেদন করি। ওই গ্রাম আদালতে রায়ও আমি পাই। তার পারেও আদালতের রায় ও গ্রাম আদালতে রায়কে অমান্য করে গত শনিবার ভোর রাতে সিরু মিয়া ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন আমার ৩০ শতাংশ জমি কাঁচা আমন ধান কেটে নিয়েছে যায়। বাঁধা দিতে গেলে আমাকে আমার ছেলেকে মারধরও করে তারা। আমি নিরীহ মানুষ শক্তি দিয়ে তাদের সাথে পারতাম না বাবা। তাই চেয়ারম্যান সহ এলাকার মাতাব্বরদের জানিয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজ মিয়া তার উপর সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে তিনি বলেন , আমি আমার জমিতে ধান লাগিয়েছি। সেই ধান আমি কেটে এনেছি। বরং তাই একটি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে আমার জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি ধান রাতের আঁধারে কেটে আনছিনা। সকালে ধান কেটে আনছি। কেউ বাদঁধাও দিছেনা। কেউরে মারধরও করছিনা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মৃদুল কান্তি সরকার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!