মোঃ বাবুল চট্টগ্রাম জেলা

সম্প্রতি সময়ে দেখা যাচ্ছে অনলাইনে হাজারো প্রকার প্রতারক চক্র মোবাইল ল্যাপটপ খুললেই দেখা যায় কত প্রকার কত রকম বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে চাকুরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ০১ জন গ্রেফতার
পাপড়ি নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। কেবলই পড়াশুনা শেষ করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করে সে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা আজাদীতে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে পাপড়ি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ইমেইলে বায়োডাটা পাঠান।
কয়েকদিনের পরেই ফোন আসে পাপড়ির কাছে। নাম-ঠিকানা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করে অপর প্রান্ত থেকে জানায় আপনার সিভি এবং অভিজ্ঞতার কাগজপত্র দেখে আমাদের প্রতিষ্ঠান আপনাকে যোগ্য মনে করে এ পদের জন্য চাকুরী নিশ্চিত করেছে। রেজি. এবং পত্রালাপের ফির জন্য আপনাকে ৫৭৫/- টাকা জমা দিতে হবে আজই। পাপড়ি দ্রুত টাকাটা বিকাশ করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে এবং পরিচিতজনদের চাকুরী পাবার খবর জানাতে থাকে। পরদিন আবার ফোন আসে, অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় আপনাকে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হবে। পাপড়ি একাউন্ট রয়েছে জানালে তাদের নির্ধারিত হিসাবে বেতন বোনাস এবং একাউন্টস মেইনটেইন করার জন্য নতুন হিসাব খুলতে হবে বলে জানায়। টাকাটা দ্রুত বিকাশে পাঠিয়ে দেয় পাপড়ি।
তিনদিন পর আবার ফোন, আপনার মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে। কেননা সরকার আপনাকে একটি স্কুটি বরাদ্দ দিয়েছে। আরেকটি ল্যাপটপও দিয়েছে। আপনাকে এই চাকুরি করতে হলে স্কুটি নিতে হবে, লাগবে বেশকিছু মেডিক্যাল সরঞ্জাম। আপনাকে সাড়ে তিনলাখ টাকার এই সকল জিনিস সরবরাহ করবে আমাদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চাকুরির শুরুতেই তো আপনাকে প্রতিষ্ঠান এত টাকা দিবে না। আপনি এজন্য আমাদের জামানত হিসাবে ১ লক্ষ টাকা দিবেন। কোনকিছু না ভেবেই এমএফএস এর মাধ্যমে পাপড়ি সেই টাকা দ্রুত পাঠিয়ে দেয় চাকুরিদাতা ঐ ব্যক্তিকে। দুই দিন পরে চাকুরিদাতা ব্যক্তি বলে, “আপনার চাকুরি কনফার্ম। আপনি টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনার টিমের আরও ১০ জন আছে। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের টাকা সংগ্রহ করে আমাদের পাঠিয়ে দিবেন। জানুয়ারি/২০২৩ থেকে আপনারা সবাই চাকুরি শুরু করবেন।’’ পরে সেই ১০ জনের আড়াই লাখ টাকাও সংগ্রহ করেন পাপড়ি। পাঠিয়ে দেন চাকুরিদাতার বিকাশ নম্বরে।
সমুদয় টাকা পেয়ে যান ঐ ব্যক্তি, কিন্তু তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়না। টাকা পাওয়ার পরে কথিত চাকুরিদাতা পাপড়ির সকল যোগাযোগের নম্বর বন্ধ করে দেন। বুঝতে পারে তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। নিম্নবিত্ত পাপড়ি অসহায় হয়ে পরে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। উপায়ান্তর না পেয়ে যোগাযোগ করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে। সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম পাপড়ির অভিযোগ আমলে নিয়ে বেশ কিছুদিন এনালাইসিস করে প্রতারককে শনাক্ত করেন। ২৩/০২/২০২৩ খ্রিঃ গাজীপুর জেলার টঙ্গী এবং নারায়নগঞ্জ জেলায় অভিযান পরিচালনা করে কথিত চাকুরিদাতা মোঃ আজিজুল ইসলাম (৩০), পিতা- মোঃ জালাল উদ্দিন, মাতা- লিলিফা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম+পোস্ট- খাজরা, থানা- আশাশুনি, জেলা- সাতক্ষীরা। বর্তমান ঠিকানা- কামাল সাহেবের বাড়ি, থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ-কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আজিজুল ঘটনার সমুদয় বিষয় স্বীকার করেন।
প্রতারনায় ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সীম এবং বিকাশ ও নগদ একাউন্ট জব্দ করা হয়। মূলত অনলাইনে প্রতারনাই তার পেশা। ২০১৮ সাল থেকে এ ধরনের কাজ করে আসছেন। অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষের সাথে এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছে মর্মে স্বীকারোক্তি দেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। একদিনের রিমান্ডে আজিজুল এখন সিআইডি সাইবার ক্রাইমের হেফাজতে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!