রুহুল আমিন জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ

রাতের অঁধারে মানিকগঞ্জে ঘিওর উপজেলায় অধিগ্রহনকৃত ফসলী জমির মাটি যাচ্ছে স্টোন ব্রিক্সে। আর এই ফসলী জমির মাটি চরা দামে বিক্রীর অভিযোগ উঠেছে একাধিক প্রভাবশলী মাটির ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের ভট্রবাড়ি, দ্বিমুখা মৌজার হতে ঘিওর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, রাসেল ও মিরনসহ একাধিক মাটি ব্যাবসায়ীরা এক তৃতীয়াং ফসলী জমির মাটি রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্টোন ব্রিক্সসহ অন্যান্য ইট ভাটায়। ফসলী জমির মাটি কেটেই খান্ত হয়নি সরকারি অধিগ্রহনকৃত জমির মাটিসহ বিক্রী করে দিচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, ভট্টবাড়ি ও দ্বিমুখা মৌজার অধিগ্রহনকৃত ফসলী মাটি যাচ্ছে স্টোন ব্রিক্সসহ বিভিন্ন বাংলা ইট ভাটায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহনকৃত জমি ভট্রবাড়ি মৌজার আর এস ১১১,১১০,১০৯ নং দাগের জমির মাটি মনির, পিলু, জন, প্রতাব ও শ্যামল রাজবংশী নামের ব্যক্তিরা স্টোন ব্রিক্সের ঠিকাদার আনোয়ার হোসেনের নিকট বিক্রী করে দেয়। ঠিকাদার রাতের আঁধারে ১৪ ফুট গহীন করে মাটি কেটে নিয়ে যায় স্টোন ব্রিক্সে। অতিরিক্ত গহীনের ফলে পাশের জমি আবার মারাত্বক ভাবে ক্ষতি সাধন হচ্ছে। একটু খানি বৃষ্টি হলেই ভেঙ্গে পরবে পাশের ফসলি জমি। এতে একদিকে ক্ষতি করছে পরিবেশের অন্য দিকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে ফসলী জমির।
কৃষি জমি সুরক্ষার আইন থাকলেও মাটি খেকোরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমি রক্ষার আইকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাতের পর রাত ফসলি জমির উপরের মাটি কেটে বিক্রি করছে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি অবৈধ ভাটায় ইট পোড়ানোর দূষণে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশর। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে মাটি পরিবহনের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন সড়ক ও মহাসড়কের। তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা ও তাদের পেটুয়া বাহিনি জড়িত থাকায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না সাধারন কৃষক।
উপজেলার তিন ফসলী কৃষি জমির শ্রেনী পরিবর্তন করার ফলে, পরিণত হচ্ছে, ডোবা, নালা, খাল, পুকুর ও জলাশয়ে। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী কূলে। জনস্বাস্থ্য পড়েছে মারাত্বক হুমকির মুখে এবং ফসলি জমি কমে যাওয়ার কারনে উৎপাদিত ফসলের পরিমানও কমছে। গ্রামের সাধারন মানুষ কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধে বাঁধা ও আইন শৃ্খংলাবাহিনীর নিকট অভিযোগ দিলেও কোনো ভাবেই থামছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে বসে আছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী লোক ও বর্তমান সংসদ সদস্যের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রশাসনও নিচ্ছে না কার্যকরী ব্যবস্থা। আবার মুঠোফোনে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার জন্য একাধিক মাটি ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন বড় বড় অফার।
২০১৫ সালের কৃষিজমির সুরক্ষা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোন কৃষি জমি নষ্ট করে আবাসন বাড়ি-ঘর,শিল্প-কারখানা,ইটের ভাটা কোন কিছুই নির্মান করা যাবে না। এবং কি ফসলী জমির মাটি কেটে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করা যাবে না। তবে আরো শর্ত থাকে যে, ভূমির অপচয় রোধকল্পে জমির অধিগ্রহন নূন্যতম পর্যায়ে রাখতে হবে এবং অধিগ্রহনকৃত জমির অপব্যবহার সম্পূর্নরুপে বন্ধ করতে হবে। কৃষি জমির সুরক্ষা আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেই হন না কেন ৫ বছর কাড়াদন্ড বা সর্বনি¤œ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সাথে পূর্বানুমতি ছাড়া জমির শ্রেনী পরিবর্তন করা হলে শ্রেনী পরিবর্তনকারীকে তার নিজ দায়িত্বে উক্ত জমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে দু,একটি অভিযান পরিচারনা করলেও স্থায়ীভাবে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন, বিষয়টা রহস্যজনক ?
জমির মালিক পিলু মিয়া বলেন, এলাকার মানুষের গোসলের পানির অভাব তাই মাটি বিক্রী করে দিয়েছি। কার নিকট মাটি বিক্রী করেছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টোন ব্রিক্স এর ঠিকাদার ঘিওর প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক আনোয়ার, মিরন ও এমপির ভাগ্নে রাসেলের নিকট মাটি বিক্রী করেছি। তারাই এই মাটি স্টোন ব্রিক্সে দেয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আনোয়ারের সাথে কথা বললে তিনি মাটি কাটার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমি স্টোন ব্রিক্সের সাথে ব্যবসায় জড়িত আছি। রাতের আধারে মাটি কাটার কথা যারা আমার সম্পর্কে বলেছে তারা মিথ্যে বলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, আমাদের অধিগ্রহনকৃত জমির মাটি কেউ যদি কেটে নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!