সাব্বির মির্জা স্টাফ রিপোর্টার

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৩২৪ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মন্দির কেন্দ্রীয় রাধা গোবিন্দ মন্দির সে‌জে‌ছে অপরূপ সা‌জে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন হিন্দু প্রধান তাড়াশের জমিদার বনওয়ারী লাল রায় বাহাদুর ১১০৫ বঙ্গাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি উপজেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে তাড়াশ প্রেসক্লাব থেকে ১০০ গজ উত্তর-পশ্চিমে। ২ একর ৬ শতক জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা মন্দিরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মন্দির হিসেবে খ্যাত।

তাড়াশ উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ জানান, চারকোণ ও দ্বীতল বিশিষ্ট মন্দিরটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফুট, প্রস্থ প্রায় ১৮০ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। এর অভ্যন্তরে রয়েছে বর্ণিল কারুকার্যে খচিত ২৫টি গোলাকৃতি স্তম্ভ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দিরের ভেতরে শোভা পাচ্ছে রাধা-গোবিন্দ, বাসুদেব, গৌর-নিতাই ও নারায়ণ শিলা মূর্তিটি। কথিত আছে এ মন্দিরটির কারণে সারা বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাড়াশ ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ নামে খ্যাত। দর্শনীয় এই মন্দিরে পূজা দিয়ে ধর্মীয় তুষ্টি মেটান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

দীর্ঘ‌দিন ম‌ন্দির‌টির সংস্কার কাজ না হ‌লেও, সনাতন সংস্থার বর্তমা‌নে ক‌মি‌টির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ম‌ন্দির‌টির সংস্কার কাজ চল‌ছে, সেই সা‌থে মন্দি‌রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দর্শনা‌র্থী‌দের কা‌ছে আরও চমৎপদ করার জন‌্য চল‌ছে ঘষামাজা ও রং এর কাজ। প্রথ‌মে সাদা রং এর পর ম‌নোমুগ্ধকর গেড়ুয়া রং করা হয়।

ম‌ন্দি‌রের পা‌শে বসবাস করা শ্রী চৌতন‌্য রজক বলেন, বাপ দাদার কা‌ছে শু‌নে‌ছি আমা‌দের এই ম‌ন্দির বহু পুরাতন। রং করার ফ‌লে ম‌ন্দি‌রের সৌন্দর্য বে‌ড়ে গে‌ছে। বহু দূর-দূরান্ত থে‌কে ভক্ত বৃন্দ আ‌সে এমন‌কি ভারত থে‌কেও। ফাল্গুন মা‌সে এখা‌নে নামযোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়।

দর্শনার্থী পুলন ঘোষ জানান, আমা‌দের এই ম‌ন্দির‌টি বয়স ৩২৪ বছর। এটি স্থাপন ক‌রেন বনওয়ারী রায় বাহাদুর। ম‌ন্দির‌টি দেখার জন‌্য দেশ বি‌দেশ থে‌কে বহু লোক জন আসে। বর্তমা‌নে এটির সৌন্দর্য বৃ‌দ্ধির জন‌্য রং করা হ‌য়ে‌ছে।

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সভাপতি সঞ্জিত কর্মকার জানান, প্রায় ৩২৪ বছরের পুরাতন এ মন্দিরটি আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তীর্থস্থানে পরিণত হয় এ মন্দির।

তি‌নি আরো বলেন, এখানে এক সময় ভারতবর্ষের বিখ্যাত মনীষী জগৎবন্ধু, মহানাম ব্রত ব্রহ্মচারী, নিগমানন্দ স্বামীজির মত মনীষীরা আসতেন। এখনো দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটে রাধা গোবিন্দ মন্দিরে। কালের সাক্ষী মূল্যবান প্রত্নসম্পদ রাধা গোবিন্দ মন্দিরটির স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা নিরাপত্তা, তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বি‌ভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠা‌নে এখা‌নে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপ‌স্থিত হন।

আমরা জে‌নে‌ছি যি‌নি এটা প্রতিষ্ঠা ক‌রে‌ছেন, তি‌নি বৃন্দাব‌নে এই ম‌ন্দি‌রের একটা ছ‌বি রে‌খে‌ছেন বা সেই সমকক্ষ একটা ম‌ন্দির তৈরি ক‌রে‌ছেন, যার জন‌্য একে গুপ্ত বৃন্দবন বলা হয়। একবার‌ কিছু সংস্কার করা হ‌য়ে‌ছিল তাও ২০ থে‌কে ২৫ বছর পূ‌র্বে। দীর্ঘদিন সংস্কা‌রের অভা‌বে ম‌ন্দির‌টির বি‌ভিন্ন অংশ ক্ষ‌তিগ্রস্থ হ‌চ্ছিল। আ‌মি সনাতন সংস্থার দা‌য়ি‌ত্বে আসার পর পূ‌র্বেও ম‌ন্দি‌রের সংস্কার ক‌রে‌ছি বর্তমা‌ন ২০২৩ সা‌লেও সংস্কার কর‌ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!