”নাজমুল রানা” স্টাফ রিপোর্টোর ঢাকা।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আমাদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা নিবেন। দীর্ঘদিন পর আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে যে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন, আইসিটি শিক্ষা প্রচলন এবং প্রায় ১০,০০০ আইসিটি শিক্ষককে এমপিওভুক্তকরণ, ৪,০০০ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ, ২৬,১৯৩ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, ৩০০ টির অধিক কলেজ সরকারিকরণ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তকরণ, ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান, বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিটি উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারিকরণ, কারিগরি শিক্ষাসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দান, পদ্মা সেতু চালু, দেশের সর্বত্র সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তিকরণ, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দান, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ, সন্ত্রাস দমন ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছেন। অসংখ্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ, এই প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণতকরণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপনি যে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ও দেশবাসির প্রতি সজাগ থাকার যে আহ্বান জানিয়েছেন আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই এবং জাতির যে কোন ক্রান্তি লগ্নে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ একাত্তরের চেতনায় এ সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন বাংলাদেশের শিক্ষার ৯৮ ভাগ দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারিগণ। ইউনেস্কো এবং আইএলও’র সুপারিশমালা মোতাবেক সমযোগ্যতা, সমঅভিজ্ঞতা ও সমদায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের এক ও অভিন্ন বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব ইউনেস্কো ও আইএলও’র সভা সেমিনারে যোগদানের জন্য বিদেশ ভ্রমণে যান, বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন কমিটিতে তারা পদ গ্রহণ করেন। অথচ বাংলাদেশে ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশমালা বাস্তবায়নে তারা উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন না। ইউনেস্কো ও আইএলও’র অপর সুপারিশে আছে শিক্ষকদের সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে যা শিক্ষক সমাজকে অবহিত করা হচ্ছে না। শিক্ষক কর্মচারিদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা মান শিক্ষামন্ত্রীর নিকট দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি অনেকবার প্রেরণ করেছি এবং ফেডারেশনের সাথে আলোচনার জন্য একটি সভা আহ্বানের জন্য অনেকবার ব্যক্তিগতভাবেও অনুরোধ করেছি। আজ পর্যন্ত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারিগণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকলাপের প্রতি খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

কোভিড-১৯ এর মহামারির কারণে সারা পৃথিবীতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থাও চরমভাবে বিপর্যস্থ হয়েছে। তাছাড়া আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এসকল বিষয় বিবেচনা করে আমরা শিক্ষক-কর্মচারিবৃন্দ আন্দোলনের পরিবর্তে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি ও প্রত্যাশাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় আছি। কিন্তু আমাদের এই আন্তরিকতাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শিক্ষার উন্নয়নে সবসময় সরকারকে সহযোগিতা করে আসছি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কোন অচলাবস্থার সৃষ্টি হোক আমরা তা চাই না। তাই শেষবারের মতো আমরা মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারিদের ১২ দফা দাবির ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অন্যথায়, আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারি সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে ১২ দফা বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের নিকট উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিম্নলিখিত দাবিসমূহ পেশ করছি এবং আগামী ৩০/০৫/২০১৩ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

দাবিসমূহঃ

১। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে।

২। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রদান করতে হবে।

৩। ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষাখাতে জিডিপি’র ৬% এবং জাতীয় বাজেটের ২০% বরাদ্দ রাখতে হবে।
৪। অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে, পূর্বের ন্যায় সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু করতে হবে।
৫। এমপিও শর্তপূরণকারী এবং বিধি সম্মত নিয়োগপ্রাপ্ত সকল নন এমপিও এবং অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদানকারী

শিক্ষকদের প্যাটার্নভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

৬। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পূর্বের ন্যায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করতে হবে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দুটি উচ্চতর স্কেল প্রদান করতে হবে।

৭। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের অনুরূপ বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে।

৮। এমপিও জনবল কাঠামো- ২০২১ এর ১১.১৩ ধারা বাতিল পূর্বক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মকর্তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৯। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের চাকরি বিধিমালা-২০১২ দ্রুত বাস্তবায়ন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি/গভর্ণিং বড়িতে ০১ জন কর্মচারি প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হারে কর্মচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগ দিতে হবে। ১১। কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কারিগরি ও ভোকেশনাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

১২। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে এবং অবিলম্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আপনারা বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামে অতীতেও অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা করায় আপনাদের প্রতি আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করে আজকের সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।

(অধ্যক্ষ আসাদুল হক) সমন্বয়কারী,

বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী সমিতি ফেডারেশন ও সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!