——————————————————হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ
সৌদি আরবের ৯২তম জাতীয় দিবসে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সৌদি আরবের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।খবর বাপসনিঊজ।এক অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং গভীর ভ্রাতৃত্বের সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বন্ধন বজায় রেখেছে। সৌদি আরব বাংলাদেশের কর্মশক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে মূল্যবান গন্তব্য, যারা উভয় দেশের জাতীয় উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা হয়েছে’ মন্তব্য করে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘উভয় দেশ অনেক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে, বিশেষ করে ইসলামী উম্মাহ ইস্যুতে অভিন্ন ধারণা পোষণ করে। অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, কর্মশক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীরতর হয়েছে।’আন্তরিকভাবে সৌদি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সক্রিয় এবং গতিশীল ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে মানবসম্পদ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং কৃষিতে সম্পৃক্ততার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণ করার প্রস্তাব দেয়। এই সহযোগিতার পূর্ণ সুফল পেতে, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ-সম্পর্কিত প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময় এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অগ্রাধিকার এবং সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে, যার ফলে দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপ্রয়োজনীয় সম্ভাবনা অর্জন করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার চমৎকার সম্পর্কের কারণ উভয় দেশ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, ইসলামী মূল্যবোধ, বৈশ্বিক শান্তি ও সম্প্রীতি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সমন্বিত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত পাঁচবার সৌদি আরবে সরকারি সফর করেছেন। এসব সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় মহামান্য বাদশাহ সালমান ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি শীর্ষ ইসলামিক দেশ’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।

দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার সুদৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা নিজেদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছি। আমরা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার ভবিষ্যত স্থাপনের জন্য সাম্প্রতিক ফলপ্রসূ কর্মকাণ্ডের অর্জনের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা দেখতে চাই উভয় দেশের জনগণ আগামী দিনে জনশক্তি, পরিবেশ সুরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে সক্ষম হবে।’১৯২৬ সাল থেকে বিশাল হেজাজ অঞ্চল বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌউদ রহঃ -এর অন্তর্ভুক্ত হয়। সে সময় থেকে দীর্ঘ ২১ বছর তিনি শক্ত হাতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশাল দেশকে শাসন করেন।

১৯৩২ সালের ২১ মে এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে আরবের বিভিন্ন অঞ্চল একত্রিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়।

আরবের গোটা অঞ্চল নিয়ে সৌউদ বংশের নামকরণে উপর ভিক্তি করে সৌউদের আরব তথা সৌদি আরব নাম করন করা হয়।পরবর্তীতে একই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আধুনিক সৌদি আরব গঠিত হয়।সেই থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর দিনটিকে সৌদি আরবের জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌউদ হাফিঃ এবং এইচআরএসডি (HRSD) মুখপাত্র ঘোষণা করেছেন যে, সৌদি আরবের ৯২তম জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস স্মরণে সরকারী, বেসরকারী সহ সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য ছুটি ঘোষণা করেন। রয়্যাল সৌদি এয়ার ফোর্স ১৪টি শহরে F-15, টাইফুন, F-15C বিমান এয়ার শো করবেন। রাজকীয় সৌদি নৌবাহিনী একটি জাতীয় কুচকাওয়াজে অংশ নিবে যাতে সামরিক যান এবং একটি বোট শো থাকবে। হেলিকপ্টার সহ অশ্বারোহী ও এয়ার শো করবেন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলিটারি ব্যান্ড লাইভ মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স করবে।রয়্যাল গার্ডের ক্লাসিক গাড়ী এবং ঘোড়ার প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের ১৩ টি অঞ্চলের পাবলিক পার্কে দেশের ইতিহাস এবং জাতীয় ঐতিহ্য নিয়ে উৎসবের আয়োজন করবে।

জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্কোয়ার, প্রধান প্রধান সড়ক,স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং গাড়িতে সৌদি পতাকা শোভা পাবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে রঙ বিরঙের আলোক সজ্জা করা হয়েছে। হাইপার মোল এবং মার্কেটসহ অন্যান্য বিক্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় মূল্য ছাড়ের অফার। দেশ জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছেন অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা। ছুটির দিন থাকায় সৌদিরা এই দিনে সাধারণত পরিবার, আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে জড়ো হবে। স্থানীয় রেস্তোরাঁয় উদযাপন করবে পার্টি এবং উপভোগ করে দেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস।

বাংলাদেশকে সৌদি বিনিয়োগের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে অভিহিত করে সফল এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘২.৫ মিলিয়ন বাংলাদেশী নাগরিকদের আতিথেয়তা করার জন্য আমি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’ নিজেদের বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করতে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে সৌদি সরকার এবং দেশের বেসরকারি খাতের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে সৌদি বিনিয়োগের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে এবং বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ এবং সৌদি ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশি দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!