খ ম সাইফুল হাবিব সজিব (স্টাফ রিপোর্টার) :

সন্তানকে বিক্রি করে চুরির নাটক সাজান মা
ফরিদপুরে নিজের তিন মাসের শিশু পুত্রকে বিক্রি করে হাসপাতাল থেকে ‘চুরির’ অভিযোগ করেন এক নারী। পরে পুলিশ ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে। বিক্রির ৪০ হাজার টাকাও উদ্ধার করে পুলিশ।

শিশুটির মায়ের নাম মুন্নি আক্তার (২৫)। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। তিনি তিন সন্তানের মা। তার স্বামী ইমারত ফকির মাদারীপুরের শিবচরের উতরাইল গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী প্রবাসী।

এ ঘটনায় সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, ওই নারী গত রোববার (২৬ মার্চ) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার সকালে ফরিদপুর জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের ডাক্তার নিরঞ্জন ঢালীকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তিনি ভাঙ্গা থেকে ট্রেনযোগে রওনা দেন। সকাল ৯টার দিকে তিনি ফরিদপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছান। স্টেশন বাজার থেকে একটি অটোবাইকে করে শিশু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। হাসপাতালে আসার সময় ওই অটোবাইকে একজন অজ্ঞাতনামা নারীও তার সঙ্গে স্টেশন বাজার থেকে শিশু হাসপাতালে যান। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মুন্নি উক্ত অজ্ঞাতনামা বোরকা পরিহিত ওই নারীর কাছে তার শিশুটিকে দিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হাসপাতালের নীচতলার বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে বের হয়ে তিনি বাইরে এসে দেখেন তার বাচ্চাসহ ওই নারী সেখানে নেই। তিনি বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও ওই নারীকে না পেয়ে থানায় এসে বিষয়টি অফিসার ইনচার্জকে জানান।

তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং বাচ্চাটি উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ তৎপরতা আরম্ভ করে।

পুলিশ সুপার বলেন, অনুসন্ধানকালে অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসারগণ জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে গিয়ে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযোগকারী ওই মায়ের বর্ণনা অনুযায়ী শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশের বা তার হাসপাতালের ভিতরে বাথরুমে যাওয়ার কোনো ফুটেজ নেই। শুধুমাত্র তার কথিত মামা বকুলকে নিয়ে রিকশাযোগে হাসপাতালে প্রবেশের ফুটেজটি দেখা যায়, পরবর্তী সময়ে তার মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে তার শিশুটিকে ভাঙ্গা থেকে সোমবার বেলা ১২টার দিক উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযোগকারী মুন্নি ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে তিনি তার বাচ্চাকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে আছমা নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, ওই নারী শিশুটিকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রবাসী স্বামীকে বোঝানোর জন্য চুরির নাটক সাজান। তার প্রবাসী স্বামী ঠিকমতো আর্থিক সহযোগিতা দিতে না পারায় তিনি আর্থিক সংকটে পড়ে শিশুটিকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) এমদাদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবদুল্লা বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কল) সুমন কর, ওসি এম এ জলিল, মধুখালী থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম, পরিদর্শক টিআই তুহিন লস্কর প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!