লালপুর (নাটোর)প্রতিনিধি:

নাটোরের লালপুরে জোতদৈবকী গ্রামের বাছের শেখ নামের এক ব্যক্তি তিনি গত পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। কিন্তু ২০২২/২৩ রবি মৌসুমের প্রণোদনার সরকারি সার-বীজ বরাদ্দকৃত তার নামে স্বাক্ষর দিয়ে তুলেছেন। এছাড়া তালিকায় একই পরিবারের তিন বা তার বেশি সদস্য এই প্রণোদনা পেয়েছেন।এমন ঘটনা ওই তালিকায় অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনই ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সার ও বীজ বিতরণে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর ২০২২/২৩ রবি মৌসুমের প্রণোদনার আওয়াতায় ৩ হাজার ৫শত প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

 

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার জোতদৈবকী গ্রামের মৃত কাবিল শেখের ছেলে বাছের শেখ। গত ৫ বছর আগে মারা গেছেন তিনি। তার ছেলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারি হওয়ায় তিনি তার মৃত পিতাসহ তার পরিবারের ৫ সদস্য জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে সার ও বীজ বাগিয়ে নেন।

 

এছাড়া বর্তমান লালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইসাহাক আলীর অনুসারী জাহাঙ্গীর আলম। তার পরিবার ও স্বজন মিলিয়ে অনন্ত ১১ জন তার বরাদ্দকৃত সার ও বীজ উঠিয়ে নিয়েছেন। এমন স্বজন প্রীতিতে ক্ষুব্ধ প্রান্তিক কৃষকরা।

প্রান্তিক কৃষকের দাবি, এবার কৃষি প্রণোদনা থেকে বাদ পড়েছেন প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকেরা।তালিকায় যারা রয়েছেন তারা ক্ষমতাশীন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তারা অনেকে কৃষকই না, তারা সরকারি প্রনোদনার এসব সার বীজ কম মূল্যে প্রকৃত কৃষকদের কাছে কেউ বা সার-বীজ ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

 

এবিষয়ে মৃত পিতার নামে সার-বীজ উঠিয়ে নেওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, মৃত ব্যক্তির নামে সার বীজ নেওয়া যাবে না বিষয়টি আমার জানা নাই। কৃষি অফিস থেকে আইডি কার্ড চাওয়ায় ৮ টি আইডি কার্ড দিয়েছি। পরে কৃষি অফিস থেকে ফোন দিয়ে সার ও বীজ নিয়ে আসতে বললে গিয়ে সার আর বীজ নিয়ে আসি। আর আমার পিতার টা আমি নিজে পিতার নাম স্বাক্ষর করে ছোট এক বস্তা গমের বীজ ও ২০ কেজি সার উঠিয়ে নিয়ে আসি।

 

এবিষয়ে লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক পলাশ বলেন, এবার এমপি মহাদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি অফিস সম্বনয় করে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করছে। এভাবে ভূয়া কৃষকরা কৃষি প্রণোদনার সার বীজ উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ডিলারদের কাছে বিক্রি করছেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে সম্বনয় না করে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ না করায় প্রান্তিক পর্যায়ে প্রকৃত কৃষকরা কৃষি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, সকল কৃষক আমাদের পরিচিত, আর এটা তো নির্বাচনের ভোটার তালিকা করছি না। তাই কৃষি প্রণোদনা বিতরণের তালিকা যাচ্ছাই বাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। আর প্রণোদনার বিষয়ে কথা বলতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিষেধ আছে।

মৃত ব্যক্তিকে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই আর এমন হওয়ার সুযোগও নেই। তবে এতালিকায় কিছু পান্তিক কৃষক আছে, কিছু রাজনৈতিক নেতারা আছে। এমপি মহাদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকেরা আছে। তারা তালিকা দিয়েছেন। এভাবেই তো তালিকা হয়।

 

একই পরিবারের একাধিকবার সদস্য প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই পরিবারে একাধিক কৃষক থাকতে পারে। এতে একই পরিবারের একাধিক কৃষক প্রণোদনা পেতে পারেন। তারপরও কোন অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।

 

লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রণোদনা বিতরণ কমিটির সভাপতি ইসাহাক আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মৃত ব্যক্তি বা একই পরিবারের একাধিক সদস্য প্রণোদনার সার ও বীজ পেলে এটা মারাত্মক অনিয়ম হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!