সাব্বির মির্জা স্টাফ রিপোর্টার

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ চান্দাইকোনা এলাকায় অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ৫৫ বছর বয়সী রুপা (হিজরা)। সেখানেও ছিল নানা বিড়ম্বনা। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষ হওয়ায় কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইত না। দিলেও সময়-অসময়ে সমাজের চাপে বের করে দেওয়া হতো তাকে। মানুষ হিসেবে কোনো মর্যাদা ছিল না। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাশাপাশি নানা কটুবাক্য ছুড়ে দিত লোকজন। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খাওয়া সমাজের অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর মানুষের এভাবেই দিন কেটেছে। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষের মর্যাদা ফিরেছে। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে আশ্রয়ও মিলেছে। সরকারের তরফে নেওয়া পুনর্বাসনের নানা পদক্ষেপে এখন বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা।

রুপার মতো ১৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এখন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামগোপ গ্রামের স্থায়ী বাসীন্দা।
’মুজিববর্ষে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- শেখ হাসিনার এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য ২ ইউনিটের সেমি পাকা ঘর ও ২ শতাংশ খাস জমির দলিল দেয়া হয়েছে তাদের। একজন গুরু মায়ের (হিজড়াদের নেতা) অধীনে থাকা ৭১জনের মধ্যে মোট ১৯ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দকৃত ঘর বানিয়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৮০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে। এই ২১ জন বাদে ঘর না পাওয়া ৫৯ হিজড়ার জন্যও পর্যায়ক্রমে ঘর তৈরির উদ্যোগ চলছে।
এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ঘর পাবার আনন্দে আতœহারা হয়ে গেছেন। এখন তাদের একটাই দাবী তাদের যাতে একটা কর্মসংস্থান করে দেয়া হয় যাতে তাদের অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু না নিতে হয়।

রায়গঞ্জ উপজেলায় এই প্রথম কোনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে গৃহ দেয়া হচ্ছে।এই গৃহ দেয়ার মধ্য থেকে সমাজের মধ্য থেকে বৈষম্য চল যাবে এমনটা মনে করছে সমাজের সচেতন মহল।তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য উপজেলার ধানগড়া প্রমানিক পাড়ার বাসিন্দা আশা বলেন, আমার ১০ বছর বয়সে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় আমার সংগ্রামের জীবন, এখানে সেখানে থাকতে হতো কেউ ঠাই দিতো না। কেউ ঘর ভাড়া দিতে চাইতো না,যা ও বা ভাড়া দিতো অন্যের চাপে পরে বাসা থেকে নেমে যেতে বলতো।এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটি পাকা ঘর দিয়েছেন। আমাকে মাথা গোজার ঠাই দিয়েছেন, দুই শতাংশ জমির দলিল দিয়েছেন। এখন আর আমাকে কেউ গৃহহীন বলতে পারবে না আমি অনেক খুশি।

তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য পারুল বলেন, আমি এই ঘর পেয়ে অত্যন্ত খুশি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিচয় দিয়েছেন আগে আমাদের কোনো পরিচয় ছিলো না, এখন আমাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড দিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আর একটি দাবী যে তিনি যেনো আমাদের একটা কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।
উপজেলার বেতুয়া দক্ষিণ পাড়া বর্ষা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য বলেন, আমরা এতটাই খুশি যেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।আমরা একসময় সমাজ থেকে বিতারিত ছিলাম তবে এখন আর বিতারিত নই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যে সন্মান দিয়েছেন তাতে আমারা আত্যন্ত আনন্দিত।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, আমারা প্রথম পর্যায়ে তৃতীয় লিঙ্গের ১৯ সদস্যকে ঘর দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে তাদের যে সদস্যরা ঘর পায়নি তাদেরকে ঘর দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!