মোঃসিফাত উল্লাহ, বরিশাল বিভাগীয় প্রধানঃ

 

 

বরিশালের উজিরপুরে ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নির্মাণকাজ থমকে আছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উপজেলার ছয় ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।

উপজেলার ডাকবাংলো থেকে চেরাগআলী মার্কেট পর্যন্ত সড়কটি সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০২১-২২ অর্থবছরে মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের (জিওবি) আওতায় সড়কটির জন্য ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২২ সালের এপ্রিলে কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মো. ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। চুক্তি অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ওই বছরের নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল তাদের। কাজ শুরুর কিছুদিন পরই তা বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা এলজিইডির এক কর্মকর্তা বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও কাজ শুরু করছেন না ঠিকাদার। এতে সদরের সঙ্গে কয়েকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে মেসার্স মো. ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের অংশীদার এস এস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাবুদ্দিন আজাদ বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে কাজের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর দামও তখন বেড়ে যায়। এ কারণে যথাসময়ে সড়কটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
উজিরপুর সদরে আসা-যাওয়া করতে এ সড়ক ব্যবহার করতে হয় সাতলা, হারতা, ওটরা, জল্লা ও বড়াকোঠা ইউনিয়নের মানুষের। অনেকেই বলছেন, এখান দিয়ে ভালো কাপড়চোপড় পরে কেউ আসতে পারে না। ব্যাগে করে নিয়ে আসতে হয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে চেরাগআলী থেকে হারতা বাজার পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরিশাল এলজিইডির ফ্ল্যাট ড্যামেজ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্পের (এফডিআর) অধীনে কাজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ৩৬৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের নভেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সড়কটি পড়েছে ওটরা ও হারতা ইউনিয়নে। নির্ধারিত সময়ের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর জন্য ঠিকাদারের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি স্বীকার করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী টিপু শেখ। তিনি এর জন্য নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করেন। এ কারণে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেননি বলেও জানান। টিপু শেখ বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছি। দ্রুতই কাজটি সম্পন্ন করব।’ ফরিদ নামের এক লোক বলেন উজিরপুরের মানুষ বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থেকে বঞ্চিত। ঠিকাদাররা বছরের পর বছর রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখেন। এ নিয়ে তাঁরা একাধিকবার এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও সংসদ সদস্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

ওটরা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক রাঢ়ী নির্মাণকাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির জন্য ঠিকাদারকে দায়ী করে বলেন, ‘দেড় বছর ধরেই সড়ক দুটির নির্মাণকাজ বন্ধ। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।’ প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, ‘ঠিকাদারদের কাজগুলো শেষ করতে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছি। তাঁরা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে কথা দিয়েছেন।’

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদার বলেন, ‘উজিরপুরের জন্য সড়ক দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে অনেক আগেই টেন্ডার করিয়েছি। কিন্তু কপাল খারাপ। সময়মতো ঠিকাদাররা কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেনি।’ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি ঠিকাদারসহ এলজিইডির বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!