নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ঈদগাঁও থানার ওসির নাম ভাঙিয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আলী নামের এক প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি।

হাসান আলী ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ধর্মের ছড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে এবং সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য।

গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ঈদগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বাঁশকাটা এলাকার মৃত খুইল্যা মিয়ার ছেলে মোঃ ছৈয়দ আলম। যার মামলা নং ০৯/২৩, ধারা ৪০৬,৪২০।

থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবির মামলা রুজু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একমাত্র আসামী হাসান আলীকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোমাতলী মৌজায় হাফেজের ঘোনা নামের ১টি ২৪০ একরের চিংড়ি ঘের রয়েছে। উক্ত ঘের নিয়ে নাপিত খালি মৌজার কৈলাশের ঘোনা নামক অপর একটি চিংড়ি ঘেরের লোকজনের সাথে পূর্ব থেকেই খালে দখল বেদখল নিয়ে বিরোধ বিদ্যামান ছিল। বিরোধ পূর্ণ সমস্যা নিয়ে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে হাসান আলী এলাকায় শালিস বিচার করে থাকে।ঐ সময় উপস্থিত বিচারপ্রার্থীদের সামনে শালিস না মানলে থানার অফিসার ইনচার্জের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এবং মামলা হুমকি দেয়। ঘের কমিটির সদস্যরা সমস্যাটি সমাধানের লক্ষে হাসান আলীর দারস্থ হন। এ সময় খালটি পুনরুদ্ধার করে দেওয়ার কথা হাসান আলীকে জানালে, হাসান আলী ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিলে সমস্যাটি সমাধান করে দিবে বলে আশ্বস্ত করেন।

তার প্রতি আস্থা এনে ঘের কমিটির সদস্যরা গত ২ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৩৫ হাজার টাকা, পরদিন ১ লক্ষ টাকা টাকা, ৫ জানুয়ারী ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেয়। ঐ সময় আসামী হাসান আলী ওসিকে ১ লাখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ১ লাখ, পুলিশ সুপারকে ১ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।
বাদী এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ইতিপূর্বে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবির অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজার রাখার নিমিত্তে থানায় আসতে বলে। উভয় পক্ষ থানায় এসে ঘেরের বিষয়ে বিষদ আলোচনা হয়। ঐ সময় ওসি প্রাথমিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিরোধীয় খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তিটুকু বাদ দিয়ে রেকর্ডিয় সমস্ত সম্পত্তি ভোগ দখল করতে বলেন। ঐ সময় তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং আদালতের মাধ্যমে বিরোধীয় বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য পরামর্শ দেন।

মামলার বাদী মোঃ ছৈয়দ আলম জানান, থানার অফিসার ইনচার্জের সব নির্দেশনা আমরা দুই পক্ষ মেনে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ি।তখন ওসি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তার নাম ব্যবহার করে কেউ যেন টাকা পয়সা না নিতে পারে বা কাউকে না দেয়। তার আগে আসামি হাসান আলী পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসির নাম ভাঙিয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। ঘোনার বিরোধীয় পক্ষ বিভিন্ন সময়ে জমি দখলের চেষ্টা চালায়, প্রতিবারই পুলিশের সহযোগিতা চাইলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করে পুলিশ। তারপরও কৈলাশের ঘোনার লোকজন পেশী শক্তি প্রদর্শন করে খাল দখলে নেয়। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ খাল পুনরুদ্ধার করতে না পেরে আসামি হাসান আলীর সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ কি তোমাদের জমি উদ্ধার করে দিবে? তোমরা তোমাদের লোকজন নিয়ে দখল করো, পুলিশ তোমাদের পাশে থাকবে। তার কথাবার্তা রহস্যজনক হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে আজকাল দিব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। ঘের কমিটির সদস্যরা নিশ্চিত হয় যে আসামি হাসান আলী তাদের সরলতার সুযোগে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘদিন টাকা ফেরত না দিয়ে চল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়ায় থানায় মামলা দায়ের করেন বাদী মোঃ ছৈয়দ আলম।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, হাসান আলী ছাত্র জীবনে চট্টগ্রাম পড়াশোনার সময় একটি কলেজে ইসলামি ছাত্র শিবিরের মতো সংগঠনের বায়তুল মাল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে শিবিরের প্রভাব বিস্তার করে বন বিভাগের জমি দখল, সার ও লবণ পাচার, বন কর্মকর্তাদের রাইফেল ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে এই হাসান আলী। তৎকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে সার পাচারের মামলাও হয়েছিল। যার এফআইআর নম্বর ০৬/০৭, জিআর নম্বর ৩৭, ধারা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(এ) পরে যোগ দেয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের রাজনীতিতে।
ক্ষমতার পালা বদলে আওয়ামী লীগ নেতা আপন বড় ভাই মরহুম মনজুর আলমের হাত ধরে ১৮ সালে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়ে শুরু করে নানান প্রতারণা মুলক কর্মকান্ড। পূনরায় শুরু করেন সরকারি খাস জমি, রিজার্ভ জমি দখল পূর্বক বিক্রি । দখলদারদের তালিকা করে বন বিভাগের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।

অভিযোগ আছে, ইসলামপুরের জনৈক বিউটি আক্তার নামের এক প্রতারক নারী এনজিওর নাম ব্যবহার করে প্রান্তীক জনপদের সহজ সরল মানুষদের ঘর, নলকূপ, বাথরুমসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গতবছর প্রতারণা দায়ে বিউটি আক্তারকে এলাকাবাসী ধৃত করে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। সেদিন গভীর রাতে প্রতারক নারী বিউটি আক্তারের সমস্ত টাকা ভুক্তভোগীদের ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে থানা পুলিশ থেকে জিম্মায় নিয়ে আসে হাসান আলী। পরে প্রতারক নারী বিউটি আক্তার থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পাঠিয়ে দেয় হাসান আলী। তাছাড়া তার স্ত্রী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পরিচালনা পর্ষদের একজন হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে লবণ মিল মালিকদের বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া মওকুফ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানান, ইসলামপুর বাজারের তার নিজস্ব অফিসে মাদকের লেনদেন নিয়ে প্রায় সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!