শেফাইল উদ্দিন 

কক্সবাজারের  ঈদগাঁওতে কক্সবাজারঃ ‘পর্যটন বিকাশে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা’ শীর্ষক শিক্ষা সেমিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বৃহস্পতিবার ( ৯ মার্চ) সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ের মোখতার আহমদ মিলনায়তনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের সভাপতিত্বে  আয়োজিত  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবেদ,বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাসুম বিল্লাহ।প্রধান বক্তা হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও কথা সাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ।
তিনি তার প্রবন্ধে বলেন,  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের গৌরব এবং সম্পদ। এটি বিশ্বের ঐতিহ্যও বটে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় মডেল হতে পারে।
কথা সাহিত্যিক মুজতবা বলেন, পর্যটন একটি বহুমাত্রিক ও শ্রমঘন শিল্প। দ্রুত সম্প্রসারণশীল ও বৃহৎ বাণিজ্যিক কর্মকান্ড হিসেবে এ শিল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের মধ্যে পর্যটন খাতের অবদান দাঁড়াবে ১.৯ শতাংশ।
তার মতে দেশে এখন পর্যন্ত নতুন পর্যটন স্পট ১২০০টি। এর মধ্যে কিছু পর্যটন স্পট কে দ্রুত আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মুজতবা  মুরশেদ উল্লেখ করেন, পর্যটনের মাধ্যমে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পুরাকীর্তি ও প্রত্নতত্ত্ব, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন দ্বারা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা সম্ভব।
এ কবি ও কথা সাহিত্যিক আরো বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প বিকাশে হিমালয় সমান সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে ছিনতাই, নিরাপত্তাহীনতা, চালকদের জোড়াজুড়ি, ফেরিওয়ালাদের উৎপাত, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য ও স্থানীয়দের অসহযোগিতামূলক আচরণ প্রভৃতি। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ফিট্স ফাউন্ডন্ডেনের চেয়ারম্যান, কবি, লেখক ও সম্পাদক ডক্টর গোলাম মোস্তফা।
স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক।
ইংরেজি শিক্ষক হাবিব উল্লাহর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিম, সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, কবি মানিক বৈরাগী ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য আব্দুর রহিম। অনুষ্ঠানে কলেজ ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অন্য বক্তারা পর্যটন বিকাশে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে বলেন, বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানগুলো দূষণের শিকার। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকায় ভ্রমণ কালে পর্যটকরা তাদের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। এতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। কক্সবাজারের অবস্থা আরো নাজুক। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কক্সবাজার পৌর এলাকায় প্রতিদিন শহরে ৩০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এসব বর্জ্য নালা কিংবা সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে ময়লার গন্ধে থাকা যাবে না। তাই নিজ হাতে সমুদ্র নষ্ট করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়াও বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সিনিয়র শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেছেন,
শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে করলে কক্সবাজারে পর্যটন বিকাশের অপার সম্ভাবনাকে একটি আন্দোলনে রূপ দিতে পারে। এতে তারা হয়ে উঠবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
সরকারের অতিরিক্ত এ সচিব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বহুমাত্রিক পর্যটনের শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে শুধু কক্সবাজারে। বিষয়টি চিন্তা করে সরকার ২০১০ সালে পর্যটন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। বহুমাত্রিক পর্যটনে থাকবে সাংস্কৃতিক, ইকো, স্পোর্টস ও ট্যুরিজম ভিলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!