
এফ এম বুরহান, খুলনা প্রতিনিধি: ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে না এমন মানুষ জগতে খুব কম আছে। আর যদি হয় প্রাকৃতিক উপভোগ করার কথা তাহলে তো কথাই নেই। বিলে মাজা সমান পানিতে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে প্রিয় মানুষদের সাথে ঘুরে প্রাকৃতিক দেখার মজাই আলাদা । আর যদি নীল আসমানের নিচে বিলের মাঝে বাঁশের ছই দিয়ে নৌকা চালিয়ে, নৌকার দু ধরে শিশুদের হাসির মতো যদি ফুটফুটে ফোটা পদ্মফুল দেখা যায় তবে তো আর কিছু লাগে না। কিন্তু সব জায়গায় তো এমন প্রাকৃতির দেখা মেলে না। তবে এমন একটি সৌন্দর্যপূর্ণ পদ্ম ফুলের দেখা মিলেছে খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায়।
পূর্বে মানুষ এই বিলকে ভ‚তিয়ার বিল নামে চিনলেও পদ্ম ফুল ফোটার কারণে এটি এখন পদ্মবিল নামে পরিচিত পেয়েছে পর্যটকদের কাছে। কর্মব্যস্ত একঘেয়েমী যান্ত্রিক জীবনের জ্বালা দূর করতে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন এই পদ্ম বিল থেকে ।
পদ্ম বিলে যাওয়ার উপায়, খুলনা শহর থেকে জেলখানাঘাট পার হয়ে সেনেরবাজার থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে তেরখাদায় যেতে তেরখাদাগামী যানবহনে (বাস,ইজিবাইক, সিএনজি, লেগুনা) উঠতে হবে তাতে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ৫০ টাকা করে । তেরখাদার কাটেঙ্গা বাজার নামক একটা জায়গায় নামতে হবে। সেখানে থেকে ভ্যানে করে যেতে পারবেন পদ্ম বিলের তীরে , পদ্মবিলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ওখানে পাবেন অনেক ছোট, মাঝারি ডিঙ্গি নৌকা । ভাড়া নিবে নৌকাপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। পর্যটক বেশি হলে ১ হাজারও দিতে হতে পারে ভাড়া। পুরো পদ্মবিলের মনমুগ্ধকর পরিবেশ মাঝিরাই দেখাবে ।
এখানে গিয়ে দেখতে পাবেন, বিস্তৃত জলরাশির বুকে দল বেঁধে ফুটে আছে চোখ জুড়ানো পদ্ম। যত দূর চোখ যায় সবুজ গাছের সাথে মিশে হাতছানি দিচ্ছে জলরাশির পদ্ম আর পদ্ম। এখানকার মনভোলানো দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, খুলনার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী মোল্লা মুহাম্মদ পিয়াস মাহমুদের সাথে। তিনি বলেন, অনেকের মুখে পদ্মবিলের নাম ও সৌন্দর্যের কথা শুনেছি তাই গত পরশুদিন বন্ধুদের সাথে আলাপ আলোচনা করে এখানে ঘুরতে এসেছি এবং আমরা এখানকার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এখানের মাঝিদের ব্যবহার অনেক ভালো।
আরো এক পর্যটক মুহাম্মদ শাকিল গাজী বলেন, পদ্ম বিলে ঘোরার জন্য আমরা বিকালের সময়টাকে বেছে নিয়েছি এই সময়টিতে বেশ মনোরম পরিবেশ থাকে।
বিলে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ভোর না হয় বিকেলকেই বেছে নিতে হবে। হোগলাবন, কচুরিপানার মধ্য দিয়ে ছোট ডিঙি নৌকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াতে আর পছন্দের ছবি তুলতে পারেন। মেতে উঠতে পারেন সেলফি উৎসবে। পদ্মপাতার জলে বিলিয়ে দিতে পারেন নিজেকে। সাথে সামান্য রোদ আর মেঘ-বৃষ্টির খেলা হলে তো কথাই নেই। বিলে ফুটে থাকা অজস্র পদ্ম ছবির মতো সাজানো। বিলটি আকারে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর হলেও ৪০-৫০ হেক্টর সীমানায় ফোটে পদ্মফুল। বাকি অংশে রয়েছে হোগলা, কচুরিপানা ও শেওলা।
স্থানীয় নৌকা মাঝি মোঃ রিপন জানান, বছরে তিনমাস বিলে পানি থাকে, তখন পদ্ম ফোটে। এই সময়টাতে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। তখন বিলে নৌকায় করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে উপার্জন করি। বছরের বাকি সময়ে অন্যান্য কাজের প্রতি ঝুঁকতে হয়। এটাকে যদি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে অনেকের কর্মসংস্থান হবে; একই সাথে সাধারণ মানুষ বিনোদনের জায়গাও পাবে।