রুহুল আমিন,জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে বসতিপূর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ সিসা কারখানা। উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের আটকড়িয়া গ্রামের ওই সিসা কারখানায় রাত ৮ টা থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া আর রাসায়নিক পদার্থে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বলধারা ইউনিয়নের আটকড়িয়া এলাকায় একটি ইটভাটার পাশে ৪ বছর আগে স্থানীয় জহিরুল ইসলাম ও অরবিন্দ মন্ডল নামে দুই ব্যক্তি সিসা কারখানাটি নির্মাণ করে। কয়েক বছর আগে প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেন। তবে থেমে নেই কারখানার কর্মযজ্ঞ। রাত আটটা বাজলেই শুরু হয় সিসা গালানোর কাজ, চলে ভোররাত পর্যন্ত। কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আটকড়িয়া, চাইরানী পাড়া,ছোট কালিয়াকৈর ও রামকান্তপুর এলাকার মানুষ ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল, মরে যাচ্ছে আশেপাশের গাছপালা।

স্থানীয় নদের চাঁদ মন্ডল বলেন,
আমাদের গ্রামের সবার শরীরে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সীসা ঢুকে যাচ্ছে। গুরুদাস, চায়না রানী সরকার,স্বপন মন্ডলনামে তিন ব্যক্তির শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন , রক্তে সীসা মূত্র থলির ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। সিসা কারখানাটি আমাদের আস্তে আস্তে হত্যা করছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এবিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রামকান্তপুর এলাকার গোসাই দাস সরকার বলেন, ৩/৪ বছর আগে সিসা কারখানাটি কার্যক্রম শুরু করে। একবার প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে কারখানাটি সিলগালা করে দেয়। কিন্তু কার্যক্রম থেমে নেই। রাত আটটা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সিসা তৈরির কাজ চলে। এসময় বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষজন রাতে ঘুমাতে পারে না। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

কবির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, সিসা কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের গাছপালা মরে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধানক্ষেতে ফলন হয় না। কারখানার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রকাশ্যে প্রতিবাদও করতে পারছে না। এবিষয়ে আটকড়িয়া, চাইরানী পাড়া,ছোট কালিয়াকৈর ও রামকান্তপুর এলাকার ৪ গ্রামের লোকজন মিলে গণস্বাক্ষর দিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।

কারখানার মালিক অরবিন্দ মন্ডল বলেন, আমি সিসা কারখানাটির সাথে বর্তমান জড়িত নয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কাগজপত্রও মেয়াদ নেই। আপনি খোঁজ নিয়ে নিউজ করুন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, এবিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। খোজ নিয়ে জানতে পারি ওই সিসা কারখানায় রাতে কাজ চলে। তাই সহকারী কমিশনার আব্দুল কাইয়ূমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি খুব দ্রুত খোঁজ নিয়ে রাতে অভিযান চালাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!
%d bloggers like this: