সিরাজগঞ্জ: বিবাহিত, অছাত্র ও মামলার আসামিদের দিয়ে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। নতুন এ কমিটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা সমালোচনা।

ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পদ বঞ্চিতরা।  

জানা গেছে, সম্মেলন ছাড়াই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য তাওহিদুর রহমান বাচ্চুকে সভাপতি ও রিপন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এদিকে এক বছরের জন্য মনোনীত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রায় দুই বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গত ৩১ জুলাই ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটিতে ত্যাগী কর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বিবাহিত, অছাত্র, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তি ও মামলার আসামিরা স্থান পেয়েছেন বলে পদ বঞ্চিতদের অভিযোগ।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ বঞ্চিত কয়েকজন নেতা জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ধারা ৫-এর গ লঙ্ঘন করে সভাপতি বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক রিপন বিবাহিত ও অছাত্রদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। কমিটিতে পদ পেয়েছেন বিতর্কিতরাও। এক সময় ছাত্রদল করতেন এমন আওয়ামী বিরোধীরাও পদ পেয়েছেন। ১২৩ সদস্যের কমিটির অন্তত প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক ছাত্রদল নেতা রাজু আহম্মেদ বিবাহিত হয়েও ছাত্রলীগের নতুন কমিাটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। সহ-সম্পাদক পদ পাওয়া এক সময়ের ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া হোসেন গতি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ককটেল হামলার অভিযোগে মামলাও রয়েছে। সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজমুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম ও আশিকুজ্জামান আশিক ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন।  

এছাড়া নতুন কমিটিতে নির্ধারিত বয়স ২৯ পার হওয়ার পরও অন্তত পাঁচজন স্থান পেয়েছেন। বিবাহিত ছয়, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী সাত এবং ও অছাত্র রয়েছেন অন্তত ১০ জন। ছাত্রত্ব না থাকলেও পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সহ-সভাপতি হিমেল পোদ্দার, মোফাজ্জল হোসেন সুমন, রাশিদুল ইসলাম, আল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন আহম্মেদ, উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ইউনুস আলী নিরব। এদিকে সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন মাদক ও ছিনতাই মামলার আসামি আল মামুন।  

রাজু ছাড়াও কমিটিতে স্থান পাওয়া বিবাহিতরা হলেন- সহ-সভাপতি আজগর আলী পলাশ, সহ-সম্পাদক সাব্বির তালুকদার, উপ-সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান আকাশ, সদস্য রাসেল হাসান রাসু ও সদস্য আলমগীর হোসেন। তাদের কেউ কেউ চাকরিজীবী আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ী।

অন্য চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারা হলেন- সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ও আবু সায়েম (তিনি একটি মাদরাসার অফিস সহায়ক)।  

পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা আরও বলেন, কমিটিতে স্থান হয়নি সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থীসহ বিগত কমিটির প্রথম সারির অন্তত ২০ নেতার। এরই মধ্যে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করায় পদত্যাগ করেছেন নতুন কমিটির তিনজন। তারা হলেন- অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সীমান্ত সরকার, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তামিম ও সদস্য নাজমুল হাসান নয়ন।  

পদত্যাগী উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তামিম জানান, ৩১ জুলাই রাতে ঘোষিত কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করায় দুদিন পরেই আমিসহ তিনজন পদত্যাগ করেছি।  

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী আব্দুল হান্নান বলেন, আমি থানা ছাত্রলীগের আগের কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তিন বছর আগে থেকে সভাপতি প্রার্থীও ছিলাম। এর মধ্যে আমি বিয়ে করে ফেলায় পদের আশা করিনি। কিন্তু নতুন কমিটিতে বিবাহিত, অছাত্র এবং বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের পদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি।  

থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, সাবেক কোনো নেতার সঙ্গে সমন্বয় না করে আওয়ামী বিরোধী আর বিবাহিত, অছাত্র, মামলার আসামিদের নিয়ে কমিটি গঠন করায় দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তাওহিদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমাদের প্যাডে এ কমিটি দেওয়া হয়নি। জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।  

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ বিন আহম্মেদ জানান, থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটির তালিকা দিয়েছেন। আমরা সেটা অনুমোদন করেছি। আমরা সবাইকে চিনি না। গঠনতন্ত্রের বাইরে কাউকে কমিটিতে পদ দেওয়া হলে এবং অভিযোগগুলা প্রমাণ হলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!