দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা হাতে নিয়ে ছাদখোলা বাসে অভিনন্দনে সিক্ত হতে হতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবনে পৌঁছায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী মেয়েরা। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে সেই সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন এবং বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী থাকায় চেয়ার ছেড়ে দিতে হয় নারী জাতীয় ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনকে। তার আগে এই ছোটনকে চেয়ার ছেড়ে দেন নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।

 

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলের বাফুফে ভবন পর্যন্ত গোটা এলাকা ছিলো মুখরিত। পুরো রাস্তা ছাদখোলা বাসে রাজসিক অভ্যর্থনা জানানো হয় নারী ফুটবল দলের সদস্যদের। কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। হিমালয় জয় করে আনা শিরোপা যে ভবনে থাকবে, সেই ভবনে তখন ছিলো না কোনো আলোকসজ্জা। ব্ড্ড বেরঙিন ভবনে আয়োজন করা হয় এক সংবাদ সম্মেলনের।

 

আর এখানেই নতুন বিতর্কের শুরু। সংবাদ সম্মেলনের প্রথম ভাগে কথা বলেন স্যুট-কোট পরিহিত বাফুফের এক কর্মকর্তা। তার পাশেই বসে ছিলেন বাফুফের মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, তিনিও কথা বলেন। এরপর এক প্রতিনিধি কথা বলেন। তারপর কথা বলার সুযোগ পান গর্বিত অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এরপর কথা বলেন তাদের মেন্টর কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তাদের পাশে বসা ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন এবং সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী।

 

কোচের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল একজন আমলাকে নিয়ে সেখানে আসেন। তারা কনফারেন্স রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান কোচ ছোটন। চেয়ার ফাঁকা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মন্ত্রী তা টান দিয়ে বসে পড়েন। পাশের কাজী সালাহউদ্দিনকেও দ্রুত বসতে বলেন। এ সময় ঘর্মাক্ত দেহে অধিনায়ক সাবিনা আর কোচ পেছনে গিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন। সাংবাদিকরা বলেও তাদেরকে সামনে আনতে পারলেন না।

 

সংবাদ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সচিব বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার ঠিক পাশের চেয়ারে বসে গেলেন সেই স্যুট-কোট পরিহিত কর্মকর্তা। শুরু হলো বক্তব্যের পালা। কিন্তু যাদের অর্জন নিয়ে এই বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন, সেই আয়োজনের সংবাদ সম্মেলনের এই পর্বে একটু বসার জায়গা হলো না চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও তাদের গুরু (কোচ) গোলাম রব্বানী ছোটনের।

 

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন, বাফুফে সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল- সবাই বসে থাকলেও তাদের পেছনে অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন সাবিনা ও ছোটন। দাঁড়িয়েই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বক্তব্য দিতে হয় তাদের।

 

এক পর্যায়ে এক সাংবাদিক অভিব্যক্তি জানতে চাইলেন সাবিনার কাছে। তখন অনেক ভিড় ঠেলে তাকে মন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে মাউথস্পিচ টেনেটুনে কথা বলতে হয়েছে। কিছুক্ষণ পর আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন কোচ রব্বানীর কাছে। তখন তিনিও এক কোণা থেকে মাঝে আসেন কষ্ট করে। একইভাবে টেনেটুনে কথা বলেন সাংবাদিকদের সামনে।

 

সংবাদ সম্মেলনের এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে ইন্টারনেটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। নেটিজেনরা বলছেন, “যাদের জন্য আজকের এই উৎসবের আয়োজন, যাদের জন্য এই আনন্দের উপলক্ষ, তারাই একটু বসতে পারলো না। এ কেমন আয়োজন বাফুফের?”

 

কেউ কেউ আবার বলছেন, “দীর্ঘদিনের দায়িত্বে যাদের সফলতার নজির নেই, তারা কেন আজ বসে? ওই চেয়ারে থাকবে শুধু ইতিহাস গড়ার কারিগররা।“ কেউ আবার বলছেন, “বিরল সংবাদ সম্মেলন, যেখানে বসার চেয়ার হয়নি বিজয়ী অধিনায়ক ও কোচের।”

 

তবে ভিন্ন মতও আছে। এমন সংবাদ সম্মেলনেও দোষের কিছু দেখছেন না অনেকে। তারা বলছেন, যতোটা দোষ বলা হচ্ছে, ততোটা গুরুতর কিছু ঘটেনি। কারণ সংবাদ সম্মেলনের শুরুর দিকে সাফ জয়ী অধিনায়ক ও কোচই ছিলেন সামনের আসনে। তবে এই পক্ষের অনেকেই মনে করেন, পুরোটা সময়ই সাবিনা আর কোচ রাব্বানিকে সামনে রাখা উচিত ছিলো।

 

অনেকে আবার এ জন্য মন্ত্রী নয় বাফুফের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কোচ ও অধিনায়ককে পেছনে না পাঠিয়ে বাফুফের কর্মকর্তারাই তো তাদের আতিথ্য নেওয়া মন্ত্রীকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে পারতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!