
আকাশ মেঘে ছেয়ে গেছে, ঝাঁজালো গরম পরছে, কাজির দেউড়ির পার্শ্বস্ত গোয়াল পাড়া বস্তি এলাকার ইট-পাথরের ভাঙ্গা পথ ধরে হাঁটছে “ইচ্ছে ডানার”র সদস্যরা হরেক রকম প্রজেক্ট নিয়ে।
টিম “স্বপ্নস্পর্শীর” প্রজেক্ট ছিলো “ইম্পরট্যান্স অব এজুকেশান” সেদিনের ডিএ মায়মুনা দায়িত্ব ভাগ করে দিতে লাগল- তাওহিদ, সবুজ, আয়শা এবং পলি তোমরা সেমিনার করে ফেলো।মুস্তাকিমকে বললো- চলো আমি, আপনি, নুর। আমরা ডাটা কালেক্ট করতে যায়।-আচ্ছা চলো। বস্তির একটা কামরায় ঢুকে দেখি একজন অসুস্থ মহিলা শুয়ে আছে। মায়মুনা বললো- আন্টি আমরা একটা প্রজেক্ট নিয়ে আসছি, আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?-জ্বি। আসুন। বসুন। মায়মুনা নাম জিজ্ঞেস করতেই শুয়ে থাকা মহিলাটি উঠে বসলো, পাশে থাকা তার মেয়ে তানিয়া বলে উঠলো আমার মায়ের নাম দেলওয়ারা বেগম, আমাদের বাবা নাই, আমার মা-ই আমাদের দেখাশোনা করে বড় করেছেন। আমি তথ্যগুলো লিখতে লিখতেই বললাম আপনার ছেলে-মেয়ে কয়জন, বললেন তিন ছেলে-তিন মেয়ে ও নারা কি কিছু করেন..? বড় ছেলে বিয়ে করে সংসার করছে, মেঝো ছেলের মেন্টালি প্রবলেম তাই সে আমাদের সাথে থাকেনা। ছোট ছেলে হাসান ২য় শ্রেণিতেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। পাশ থেকে মায়মুনা জিজ্ঞেস করল কেনো ছেড়েছে জানতে পারি..? তানিয়া বলল- সে নিজ থেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। সে পড়াশোনায় মনোযেগি না। তানিয়া আরো বলছে হয়তো পড়াশোনার পরিবেশ ছিলনা, এই বস্তিতে অন্য শিশুরাও পড়াশোনা করেনা দেখে সেও ছেড়ে দিয়েছে। এরকম আরো অনেক কারণ বলতে থাকে..আমি তানিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললাম আপনি করেছেন? তানিয়া বললো – ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় করোনার খপ্পরে পরে আর উঠতে পারিনাই।
সংসার চালানোর জন্য গার্মেন্টসে চাকরী নিয়েছি। মা খুব অসুস্থ, প্রতিমাসে মা’র ঔষধে অনেক টাকা চলে যায়।করোনার খপ্পরে পড়ে এরকম শত শত তানিয়ার জিবন থেকে পড়াশোনা চিরতরে চলে গেছে। আচ্ছা একবার ভাবুনতো! তানিয়ারা যদি পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারত ,আমরা যদি তাদেরকে সুযোগ করে দিতে পারতাম! তাহলে আমাদের দেশটা কোথাই গিয়ে দাঁড়াত! সমাজে এরকম কত-শত তানিয়া ঝরে পড়ছে আমরা কি তাদের খেয়াল রাখি..? আজকে আমাদের দেশে এতো এতো দূর্নীতি, সহিংসতা, অন্যায় ইত্যাদি খারাপ কাজগুলো হচ্ছে জাতিকে উপযুক্ত শিক্ষা না দিতে পেরে। শিক্ষা সমাজের অন্যায়, সহিংসতা, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অনেক খারাপ উপাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বিকাশ করে। শিক্ষা আমাদের চারপাশের জগত সম্পর্কে জ্ঞান দেয়। এটি আমাদের মধ্যে জীবনকে দেখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। এটি জাতির বিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাহলে কেনো আমরা পিছিয়ে থাকব..? Bangla News 24 এর সূত্রানুসারে করোনায় ৩৫% শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ে। আরো এসেছে প্রাথমিকে ১৮.৮% শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ে। ৫৫% শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে মাধ্যমিকে Jugantar এর প্রতিবেদনে এসেছে। আসুন আমাদের দেশকে উন্নত দেশে রুপান্তর করতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের স্বপ্ন পূরনের সাথি হয়।
নামঃ মোহাম্মদ নুরুন্নবী।
শিক্ষার্থী- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড ট্যাকনোলোজি, চিটাগাং (ইউএসটিসি)