
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে যমুনা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে জেলার দুটি পয়েন্টেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। সেই সাথে যমুনা নদীর পাশাপাশি জেলার অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। শাহজাদপুর, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ৮ উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠ ও গো-চারণ ভূমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পবাদি পশু নিয়ে কৃষক ও খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।
বন্যার পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে কৃষক ও খামারিরা। উচু জায়গা সংকট থাকায় অনেকেই মাচা করে এই সকল গবাদি পশুগুলো রাখার চেষ্টা করছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে মানুষ থাকলেও গবাদি পশুর জন্য কোন জায়গা নেই।
তাই এই গবাদি পশুগুলো নিয়ে এখন কৃষক ও খামারিরা কোথায় যাবে জায়গা খুজে পাচ্ছে না।
অপরদিকে গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে এমনিতেই গো-খামারিরা হিমশিম খাচ্ছে, তার ওপর গো-চারণ ভূমি বন্যা কবলিত হওয়ায় তাদের বিপদ আরও বেড়েছে।
শাহজাদপুর রাউতারা গ্রামের মামুন হোসেন জানান, উজানের ঢল ও অতিবর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগরসহ সব নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। আমাদের রাউতারা স্লুইসগেট সংলগ্ন রিং বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ফসলের মাঠ ও গো-চারণ ভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘাসের জমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাঠে থাকা নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানান. শাহজাদপুর উপজেলায় ৭ হাজার গবাদি খামার রয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৭০ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই পশু বিক্রি শুরু হবে। এ অবস্থায় কাঁচা ঘাসের অভাব খামারিদের মহাবিপদে ফেলেছে।
জেলা প্রণীসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার বলেন, আমার জেলায় ৯ লাখ গরু, সাড়ে ৩ লাখ ছাগল ও ২ লাখ ভেড়া রয়েছে। এছাড়াও ঈদের জন্য ৪ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।এতিমধ্যেই এই গবাদি পশুগুলো বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন পানি বৃদ্ধির ফলে গোচারণ ভূমি বন্যা কবলিত হওয়ায় কৃষক ও খামারিদের ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা আমাকে অবহিত করেছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে কৃষক ও খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যেমন যমুনার চরের নতুন ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে, তেমনি নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি ঢোকায় অনেকেই নিরাপদ কোনো স্থানে গিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।