————-
মোঃ মাহাবুব আলম
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান

ঘি, দুধ ছাড়া যা তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমান বাজারে রসনার অন্যতম খাদ্যদ্রব্য তৈরি হচ্ছে দুধ ছাড়াই। হাল সময়ে ভেজিটেবল ঘি নামের একটি রসনা উপকরণ বাজারে আসলেও তা ভেজালে ভরা। মুলত পামওয়েল,পচা কলা, সয়াবিন, রং ও ঘি এর থ্রি ফ্লেভার মিশ্রিত করে তৈরি করা হচ্ছে ভেজিটেবল ঘি। আর বাবুর্চিকে কমিশন দিলেই এসব রং মিশ্রিত পামওয়েল ঘি হয়ে যায় এক নম্বর ঘি।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থাগুলো এসব ভেজাল ঘি এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে ভেজাল ঘি উৎপাদন ও বিক্রির সাথে জড়িতরা। উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এখন ভেজাল ঘি’তে সয়লাব। খাঁটি ঘি’য়ের তুলনায় ভেজাল ঘি’তে লাভ কয়েকগুন বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন ক্ষতিকারক এসব ঘি। ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সব হাটবাজার এখন ভেজাল ঘি’তে ছেয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের প্রবত্তি ও লোভকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি লোকচক্ষু আড়ালে মোটর সাইকেলে বা রিক্সায় করে অল্প অল্প করে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব ঘি। আর বাজারে খাঁটি ঘি না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই এ ভেজাল ঘি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। তা দিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে নানান মুখরোচক খাবার। যা খেয়ে ধীরে ধীরে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ জানতেও পারেন না যে, বাজার থেকে কিনে আনা এই ঘি’তে থাকা ভেজালের কারণে তিনি সুস্থ শরীর হারিয়ে অসুস্থ রোগীতে পরিণত হচ্ছেন।

এদিকে সাধারণ ক্রেতারা জানান, বাজারে এখন অসংখ্য ব্র্যান্ডের ঘি পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘি’য়ের মধ্যে কোনটি খাঁটি-কোনটি ভেজাল তা বোঝা তাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় দোকানিদের উপর আস্থা রাখেন। তারা যে ঘি ভালো বলে জানায় সেটি কিনে নিয়ে যান। বাড়িতে নিয়ে যাবার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন যে কিনে আনা ঘি’ ভালো মানের নয়। তখন আর কিছুই করার থাকে না। টাকাটা লোকসান দিয়ে দরকার হলে আবারো নতুন কোন ব্র্যান্ডের ঘি ক্রয় করেন। অনেক সময় পরে নিয়ে যাওয়া সেই ঘি’ও ভেজাল বলে বুঝতে পারেন। এতে হতাশ হওয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে কোন অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য বাবুর্চিকে ঠিক করা হয়। আর রান্নায় কোন ঘি ব্যবহার হবে সেটা বাবুর্চি ঠিক করে দেন। ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে পামওয়েল ঘি এক নম্বর বলে চালিয়ে দেন।সাধারণত অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের ঘি নিয়ে তেমন একটা চিন্তাও মাথাব্যথা না থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাবুর্চি ঘি দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলেনিয়ে যারসাথে বাবুর্চির কন্টাক্ট থাকে তাদের ব্রান্ডের ঘি এর নাম লিখে দেন বাবুর্চির প্যাডে ছাপানো পণ্য তালিকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়ার পাচুরিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ক্রেতাদের কাছে যখন ঘি বিক্রি করি তখন একটি টোকেন রেখে দি বাবুর্চির জন্য। বাবুর্চি রান্না শেষে ঘি এর প্যাকেটের একটি অংশ দোকানে নিয়ে আসেন। টোকেনের সাথে মিলিয়ে মূল্যের অর্ধেক কমিশন দিয়ে দেয়া হয়। আমরা এভাবে ঘি বিক্রি করতে আগ্রহী নয় তারপরও বাবুর্চি ছাড়া তো বিক্রি সম্ভব নয়। আমার দোকান থেকে না ক্রয় করলে অন্য দোকান থেকে ক্রয় করবে।
এব্যাপারে সত্যতা যাচাই করতে আমাদের এলাকার দুজন বাবুর্চির সাথে কথা বলেন বলি;দুইজনেরই অপকটে স্বীকার করে বলেন “আমরা আগে দোকানদার থেকে টোকেন দেখিয়ে কমিশন নিতাম এটা ঠিক।কিন্তু এখন এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝামেলা হচ্ছে বিধায় এখন যারা এসব ভেজাল ঘি উৎপাদন করেন তারা বড় এককেজি বা দুইকেজি প্রতিটি ঘি এর টিনের ভিতরে (বাবুর্চির জন্য আলাদা টিন করে) একটি করে প্লাস্টিকের বানানো পাঁচটাকা কয়েন এর মতো একটি টোকেন ঘি এর টিনের ভিতর দিয়ে দেন, রান্না করার সময় আমরা যখন ঘির টিন খুলেই ঐসব টোকেন গুলো নিয়ে সংরক্ষণ করি এবং পরে ঐগুলো দিয়ে আমরা ঘি কোম্পানির প্রতিনিধি থেকে আমাদের কমিশন আমরা নিয়েনি।এছাড়াও আমাদের কে বিভিন্ন কোম্পানির থেকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেওয়া হয় তাদের ঘি লিখার জন্য।
তাদের প্রশ্ন করা হলে এসব ঘি কোম্পানি কোথায় এসব ঘি উৎপাদন করেন বা কারখানা কোথায়?এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবুর্চিরা বলেন, -এটা বলতে পাড়বোনা,তবে ধরে নিতে পারেন আমার আপনার আশেপাশেই এইসব ঘি তৈরী হয়।কারো ঘরে বা কারো পরিত্যক্ত কোন নির্জন জায়গায়, কারো পরিত্যক্ত কোন পোল্ট্রি ফার্মে বা গ্রামে থাকেনা স্বপরিবারে শহরে থাকেন এমন কারো ঘরে তৈরী করে।এসব তৈরি করতে বা এগুলো প্যাকেট করতে বড়ো ধরনের কোন কারখানার প্রয়োজন হয়না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!
%d bloggers like this: