
এস.এম. আরফান আলী:
এখন বর্ষাকাল। চারদিকে পানি থৈথৈ করছে। এর মধ্যে আপনার একটু অসচেতনতাই ঘটতে পারে বড় এক দূর্ঘটনা। আমি আপনি সবাই আমাদের আদরের সন্তানকে ভালোবাসি। কিন্তু এই ভালোবাসা শেষ হতে পারে সামান্য অসচেতনতাই। শিশুরা আগুন পানিতে খেলতে পছন্দ করে। পানি দেখলেই তাদের মনে আনন্দ উল্লাস শুরু হয়। বন্যার পানি বা আপনার বাড়ির আসপাশে জমে থাকা পানিই এক সময় কাল হইয়ে দাঁড়ায়।
“বন্যার মধ্যে মানুষ তার পশু-পাখিসহ সব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেও সবচেয়ে বড় সম্পদ প্রিয় সন্তানকে আগলে রাখতে পারছে না।”
পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তত তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। এ ছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, দিনের প্রথম ভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গ্রাম ভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকর। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক। এ ধরনের দিবাযত্নের ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
তাই আপনাদের সন্তানকে নিজের দায়িত্বে নজরদারি করা অত্যাবশ্যক। এসময় যেন আপনার সন্তান ঘরে থাকে সেজন্য ঘরোয়া খেলনা কিনে এনে শিশুদের খেলায় মগ্ন রাখতে হবে। ছেলে মেয়ে কোথায় যাচ্ছে তার দিকে সর্বাদিক গুরুত্ব দিতে হবে। ছোট শিশু হলে কোনো ভাবেই চোখের আড়াল করা যাবে না। অসচেতন হইয়ে আদরের সোনামণিকে হারাতে দিবেন না। মনে রাখা অত্যাবশ্যক “একটি দূর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না”।