
স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার শাজাহানপুরে নিখোঁজ শিশু বুলবুল হোসেন বিজয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সুজন সরকার নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া সেই যুবক হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
১২ অক্টোবর বুধবার বিকেলে আদালত স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান, শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন ।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলার লক্ষীকোলা গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বিজয় হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই সঙ্গে তার দেয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে লক্ষীকোলা গ্রাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে সুজনকে সঙ্গে নিয়েই ওই অভিযান চালানো হয়।
গ্রেফতার সুজন সরকার (২৮) শাজাহানপুর উপজেলার লক্ষীকোলা গ্রামের জাফর সরকারের ছেলে।
নিহত ৯ বছরের বিজয় একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম সরকারের ছেলে। সে লক্ষিকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে বের হয় বিজয়। সকাল ১০টা পর্যন্ত তাকে গ্রামেই ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এরপর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও শিশুটি আর বাড়ি ফেরেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন।
পরে সোমবার রাত ১১ টার দিকে লক্ষ্মীকোলা গ্রামের এসএএম নামে একটি বন্ধ থাকা ইটভাটার কাছে যেতেই দুর্গন্ধ পান স্থানীয়রা। বিষয়টি সন্দেহ হলে বিজয়ের স্বজনদের ডেকে ইটভাটার দিকে এগিয়ে যান স্থানীয়রা। তারা ইটভাটার চুল্লীর (ডাম্প) ঢাকনা খুলে ভিতর টর্চ লাইটের আলোতে বিজয়ের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে লাশটি উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। বিজয়ের গলাসহ হাত-পায়ের রগ কাটা ছিল। এছাড়াও তার শরীরে আরও অনেক জখম ছিল।
ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিজয় ও আসামি সুজন পূর্ব পরিচিত। তাদের বাড়িও পাশপাশি। গত ৫ অক্টোবর বিজয় সুজনের বাড়িতে যায়। তারা বাড়িতে বসে গল্প করার এক পর্যায়ে ফুটবল খেলার উদ্দেশ্যে সুজনের বাড়ি থেকে বের হয়। তারা একসেঙ্গ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ওই সময় বিজয় আসামি সুজনের মাকে জড়িয়ে গালি দেয়। এতে সুজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয়ের গলাচেপে ধরে তাকে হত্যা করে। পরে বিজয়ের লাশ লক্ষীকোলা গ্রামের একটি কবরস্থানের পাশের বাঁশবাগানে রেখে এসে নিজ বাড়িতে চলে যায় সুজন। হত্যার পর ঐদিন দুপুরে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল সুজন। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে বের হয়ে শুনতে পারে যে, বিজয়কে সবাই খোঁজাখুঁজি করছে। এতে সুজন ভয় পেয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, ঐদিন রাতে বিজয়ের লাশ দেখতে ওই বাঁশবাগানে যায় সুজন। গিয়ে দেখে বিজয়ের লাশ সেখানে আছে। সেখানে থেকে ফিরে এসে বাড়ি থেকে ধারালো চাকু নিয়ে সুজন ওই রাতে আবারো বাঁশবাগানে যায়। এবার সেখানে গিয়ে চাকু দিয়ে বিজয়ের গলাসহ হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় সুজন। একই সঙ্গে ওই রাতেই বিজয়ের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের বন্ধ থাকা এসএএম ইটভাটার চুল্লীর ভিতর ফেলে দেয়। পরে সেই চুল্লীর ঢাকনা বন্ধ করে দেয় সুজন। বন্ধ ইটভাটার পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে ।