হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে অনেকটা বিপদে পড়েছে ভারত। ইতোমধ্যে অন্তত ১৫টি দেশ ভারতের ওপর নিন্দা জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাক, ইরান, কুয়েত, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাহরাইন, মালদ্বীপ, লিবিয়া, তুর্কিয়ে এবং ইন্দোনেশিয়া সরকারিভাবে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের জেরে ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে।

কাতার দাবি করেছে, ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অভিযোগ করেছেন, ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময় সংখ্যালঘু মুসলমানরা বিপন্ন।

কেবল এ কয়টি দেশই নয়, বিশ্বজুড়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। নানা ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আরব দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। কুয়েতে শুরু হয়েছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক। বিভিন্ন মার্কেট থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

এর সঙ্গে নতুনভাবে শুরু হয়েছে ভারতীয় শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত ও বহিষ্কারের বিষয়টি। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় ব্যবসায়ীদের কোম্পানিগুলো থেকে অমুসলিম ভারতীয় কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছেদেওয়ার ঘটনা সামনে আসছে। স্থগিত করা হচ্ছে তাদের ভিসা এবং লেনদেন মিটিয়ে তাদেরকে বাড়ির পথ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ইয়েমেনের এক বড় ব্যবসায়ী শেখ আলী আল জামাল নিজের টুইটারে লিখেছেন, আমি আমার কোম্পানিতে থাকা সব অমুসলিম ভারতীয় শ্রমিককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সমস্ত বকেয়া-পাওনা রিটার্ন টিকিটের সাথে দিয়ে দিয়েছি। শিগগিরই ভারতের তৈরি সব পণ্যের লেনদেন ও ব্যবসা-বণিজ্য বন্ধ করে দেব। কারণ আমার আবেগের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা, আমার বিশ্বাস ও ভালোবাসা নবীর প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে ভারত।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এদের মধ্যে অমুসলিম কর্মীর সংখ্যাও অনেক। মহামারি করোনা ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এমনিতেই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহ ভারতের পণ্যসামগ্রী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বয়কট করলে ভয়ংকর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে ভারত।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সুপারমার্কেটে শেলফে রাখা সব ভারতীয় পণ্য প্লাস্টিক সিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা চালের বস্তাও ঢেকে ফেলা হচ্ছে। দোকানের বিভিন্ন স্থানে লেখা হয়েছে, ভারতীয় পণ্য সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় পণ্য ও সিনেমা বয়কটের ডাক সেখানকার সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় উঠে এসেছে।

ভারতীয় কূটনীতিকরা এই দেশগুলোকে কূটনৈতিকভাবে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে দেশটির বিরোধীদলগুলো বিজেপির এই দুই নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। একইসঙ্গে বিজেপিকে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ করেছে।

তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই দুই নেতার টুইট ও মন্তব্য সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না।

ভারতের আলোচিত জ্ঞানবাপী মসজিদ ইস্যুতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন টকশোতে মহানবী (সা.) প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। এ ঘটনায় কানপুরের মুসলিমদের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হয়। এছাড়া নবীকে নিয়ে নাভিন কুমার জিন্দালও টুইটারে পোস্ট করেন। এতে মুসলিমদের মধ্যে আরও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তিনি এই টুইট পরবর্তীতে মুছে দেন।

এর জেরে গত শুক্রবারে কানপুরের একপক্ষ স্থানীয় বাজার বন্ধ করার আহ্বান জানালে অপরপক্ষ পাল্টা অবস্থান নেয়। এর পরে সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ২০ জন পুলিশ সদস্য।

ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে, মামলা দায়ের করেছে ১ হাজার ৫০০ লোকের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!