এম ডি বাবুল চট্রগ্রাম জেলা

“বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিকটিম হাফেজ মোহাম্মদ জাকারিয়া একজন পবিত্র কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মোঃ রফিকের আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের বিপরীত পাশে অবস্থিত দি মেট্রো রেফ্রিজারেশন নামক দোকানে ফ্রিজ মেরামতের কাজ শুরু করেন। উক্ত দোকান জাকারিয়ার দূর সম্পর্কের আত্মীয় রফিক ও তার বন্ধু শাহজাহান (আসামী কামালের বড় ভাই) এর অংশীদারীতে¦র ভিত্তিতে পরিচালিত হত। জাকারিয়া রফিকের ছেলে মেয়েদের আরবী পড়াতেন এবং এলাকার অসংখ্য বাচ্ছাদের পবিত্র কোরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। জাকারিয়ার কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় এবং আচার অচরণে মুগ্ধ হয়ে রেফ্রিজারেশন এর মালিক রফিক তাকে খুবই পছন্দ করত এবং আশেপাশের লোকজনও তাকে খুবই সম্মান করত। আসামী মোঃ কামালও উক্ত রেফ্রিজারেশনের দোকানে কাজ করত। তাছাড়া জাকারিয়াকে সবাই পছন্দ ও সম্মান করার বিষয়টিও কামালের ভাল লাগত না। রফিক এক পর্যায়ে দোকান বিক্রয়ের কথা ভাবলে হাফেজ জাকারিয়া দোকান ক্রয়ের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য সে জাকারিয়াকে দেখতে পারত না এবং প্রায়ই সে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া করত।

ঘটনার পূর্বের দিন দোকানের মালিকের অবর্তমানে জাকারিয়া এবং কামাল দোকান খুলে কিছুক্ষণ কাজকর্ম করার পর এক সময় উভয়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে কামাল দোকান থেকে বের হয়ে যায়। বিগত ১৭ সেপ্টেম¦র ১৯৯৮ ইং তারিখে হরতাল ছিল এবং দোকান বন্ধ ছিল। উক্ত দিনে আসামী কামাল জাকারিয়াকে জরুরী কথা আছে বলে দোকানে আসতে বলে। জাকারিয়া দোকানে আসার পর আসামী কামাল সকাল আনুমানিক ০৯০০ ঘটিকায় মগে করে এসিড নিয়ে এসে জাকারিয়াকে বলে তোর জন্য চা এনেছি, চা খা। কিন্তু জাকারিয়া চা খেতে অস্বীকার করে। এতে কামাল ক্ষিপ্ত হয়ে মগ ভর্তি এসিড জাকারিয়ার মুখে নিক্ষেপ করে। ফলে জাকারিয়ার চোখে, মুখে, বুকে, হাতে এসিড দ্বারা দগ্ধ হয়ে ঝলসে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় জাকারিয়া হতবিহব্বল হয়ে যায় এবং এসিডে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। এসিড নিক্ষেপের পরও জাকারিয়ার মৃত্যু না হওয়ায় মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কামাল দিয়াশলাই দিয়ে ভিকটিমের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পা দিয়ে কয়েকটি লাথি দিয়ে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত জাকারিয়ার চিৎকারের আশেপাশের লোকজন এসে প্রায় মৃত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে ডবলংমুরিং থানায় সংবাদ দেয়। ডবলংমুরিং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জাকারিয়াকে মৃত মনে করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ডিউটিরত প্রহরী হঠাৎ লক্ষ্য করেন জাকারিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। পরবর্তীতে ডবলংমুরিং থানা পুলিশ দ্রুত গুরুতর আহত জাকারিয়াকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যায়। টানা চারদিন সেখানে হাফেজ জাকারিয়ার শরীরে পোড়াও ঝলসানো স্থানে পানি ঢালা ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চারদিন পর তার জ্ঞান ফিরে। কিন্তু জাকারিয়ার চোখ এবং শরীরে এসিডে ঝলসানোর ভয়াবহতা দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে হাফেজ জাকারিয়া সর্বপ্রথম আয়নায় নিজের বিভৎস চেহারা দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং ৩০ দিন কোমায় থাকে। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জাকারিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এসিডের ফলে জাকারিয়ার এক চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়, চোখের পাপড়ি ঝলসে যায় এবং মুখে, বুকে ও হাতে এসিড দ্বারা ঝলসে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর জাকারিয়ার মোটামুটি সুস্থ্য হওয়ার পর সৌদি আরব চলে যায়।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া বাদী হয়ে পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ ইং তারিখে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৩৯ তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ইং, ধারা ৩২৬(ক) পেনাল কোড। ঘটনার পর হতে ডবলমুরিং থানা পুলিশ পলাতক আসামী কামালকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করে কিন্তু ধূর্ত ও চালাক কামালকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল ২০২২ইং তারিখে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিজ্ঞ বিশেষ জজ আদালত আসামী মোঃ কামালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদন্ড প্রদান করেন।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করার লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে উক্ত মামলার উক্ত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী মোঃ কামাল হোসেন চাঁদপুর জেলার শাহরাস্থি থনাধীন মেহের ষ্টেশন রোড এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখ ১৪৪৫ ঘটিকায় উক্ত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ কামাল হোসেন, পিতা-রসুল করিম, সাং-কাউনিয়া, থানা-ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে আসামী স্বীকার করে, সে বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী।

ঘটনার পর আসামী কামাল কিছুদিন পলাতক থাকার পর একসময় তার নিজ এলাকা চাঁদপুর জেলার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!