নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

 

সারাদেশে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্রাশ অভিযান নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারা দেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর গত দুদিনের অভিযানে ৮৮২টি অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে। রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযানে ঢাকা বিভাগে ১৬৭টি, চট্টগ্রামে ২২৯টি, রাজশাহীতে ৭৮টি, রংপুরে ১৪টি, ময়মনসিংহে ৯৬, বরিশালে ৫৯টি, সিলেটে ৩৫ ও খুলনায় ২০৪টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সারাদেশে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। গত শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ’ অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। এরপর আজ রবিবারও সারাদেশে অভিযান চলে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. বেলাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল। রবিবার ক্রাশ অভিযানের সময় শেষ হয়েছে। তবে রুটিন অভিযান কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। যাতে করে অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দ-িত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার গড়ে উঠতে না পারে। সেজন্য অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।

 

যারা সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে সে সময় তিনি বলেন, যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি, সেগুলো অবৈধ। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের পর যদি নিবন্ধনহীন কেউ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্সের ছাড়া আর খুলতে পারবে না। কেউ যদি খুলে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখন থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মনিটারিং করা হবে।

 

হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মনিরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তারের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। সারাদেশে ১১ হাজার নিবন্ধিত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। আর চার হাজার আবেদন জমা আছে।

স্বাস্থ অধিদপ্তরের এই উদ্যোগ স্বাস্থ্য খাতের জন্য কতটা ভালো হবে জানতে চাইলে তিনি বলন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে ৭০ শতাংশ সেবা বেসরকারি ভাবে দেওয়া হয়। সেখানে যেসব স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান একেবারেই কোনো ধরণের অনুমতি না নিয়ে চলছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও ভালো হবে। আমরা তো কোনো দিন প্রতারক শাহেদের হাসপাতালের নামও শুনিনি। অথচ সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে কত কিছু করল। এই গুলো তো বদনাম।

তিনি বলেন, যেসব স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান একেবারেই কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও ভালো হবে।

 

গত ২৫ মে দেশের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মনিটরিং ও সুপারভিশন বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

 

এরপর বৃহস্পতিবার এক সভা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অবৈধ স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।

 

সিদ্ধান্তগুলো হলো-

 

১. আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে। অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

 

২. যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে কিন্তু নবায়ন করেনি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য একটি সময়সীমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন না করলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

 

৩. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপারেশন করার সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া ও ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ডাক্তার ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িতদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

৪. যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্স পাওয়ার আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

 

উল্লেখ্য, অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে অনুমোদিত ও আবেদন করা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!