সানজিদা সুলতানা ঈদগাঁও

কক্সবাজারের বাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে। নিত্য দিন ঘটছে খুন, ডাকাতি , চুরি, ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং।অন্য দিকে স্কুল—কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে এ জনপদ। কিশোর গ্যাং লিডাররা এ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়,২১ জুলাই ঈদগাঁও বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় সড়ক অবরোধ করে এশিয়ান টেলিভিশনের ঈদগাঁও উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ওসমান গনি ইলি কে ছিনতাই করে ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল, মোটরসাইকেল ছিনতাই করে কিশোর গ্যাং ।পরে পুলিশ এসে মোটর সাইকেল উদ্ধার করেন। ২৭ জুলাই এ ঘটনায় এজাহার দায়ের করলেও এখনো মামলা রেকর্ড হয়নি থানায়।
৩০ জুলাই রাতে ঈদগাঁও মাদবর মার্কেট কিশোর গ্যাং এর হামলার শিকার হয় এক যুবক। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। গত ৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাত ঈদগাঁও ছাগলের দোকান সংলগ্ন একটি বিউটি পার্লারে কিশোর গ্যাং এর হামলার শিকার হয় নববধূ ও তার আত্মীয় স্বজনরা। তাদের চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে আসলে ছিনতাইকারী কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা পালিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে ঈদগাঁওর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই কিছু দিন আগে রাতে মেহরঘোনা থেকে অস্ত্রধারীরা গরু লুট করে। এরই কয়েক দিন আগে ইসলামাবাদ খোদাইবাডী ঢালার দোয়ার এলাকায় কিশোর গ্যাং এর হাতে তারেক নামের যুবক খুন হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এরই কয়েক দিন আগে ইসলামপুরে স্বামী নিজ শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে খুন করে। এরই সাপ্তাহ ব্যবধানে ইসলামপুরে বসতবাড়িতে ডাকাতি,এরই কয়েক দিন আগে ইসলামাবাদে কিশোরী ধর্ষণ। এর পর কয়েক দিনের ব্যবধানে পুলিশের নির্যাতনে ইসলামাবাদ ইউসুফের খীলের আসামীর মৃত্যু। সব ঘটনা গন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে ঈদগাঁও উপজেলায় আশংকা জনক হারে বাড়ছে মরন নেশা ইয়াবা বিকিকিনি। ওপেন সিক্রেট চলছে ইয়াবা ব্যবসা।
২০ জূলাই ঈদগাঁওয়ের ইয়াবা সম্রাট সোহেল গাজিপুরে র‌্যাব-৩ এর অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হলে তার সিন্টিকেটের লোকজন কিছুদিন গা ঢাকা দিলে ও এখন আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

কক্সবাজার নারীও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল ৩ স্পেশাল পিপি ঈদগাও উপজেলার পোকখালীর এডভোকেট একরামুল হুদা বলেন, কিশোর গ্যাং দিয়ে এখন ইয়াবা বিক্রি, পাচার এবং সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক কিশোর গ্যাং দিনদুপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাই করছে। খুনের মত ঘটনায় জড়িয়ে যাচ্ছে। এমন কোন স্থান নেই যেখানে বখাটের উৎপাত নাই। তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ।

সচেতন মহলের দাবী ঈদগাঁওতে একের পর এক কিশোর গ্যাং ধারা সংগঠিত হচ্ছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে নিরব ভূমিকা পালন করছেন ঈদগাঁও থানার ওসি আবদুল হালিম। থানায় জিডি বা এজার জমা করতে গিলে দুই মিনিটে বিবাদীর কাছে খবর পৌঁছে যায়। এতে নিরাপত্তা হীনতায় পড়ে যায় বাদীর পক্ষের লোকজন। কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসীর হাত থেকে বাঁচতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পুলিশ এর কাছে যায় সাধারণ জনগণ। সেখানে থেকে ফিরার আগে খবর পৌঁছে যায় কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসীর কাছে। এতে হতাশ হয়ে উঠেন ভোক্তভোগীরা। এলাকার প্রশাসন ইয়াবা উদ্ধার বা ইয়াবা সিন্টিকেটকে গ্রেফতারে করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানালেও প্রশাসন নির্বিকার।

ঈদগাঁও থানার ওসি আবদুল হালিম জানান, কিশোর গ্যাং বন্ধে আমাদের তৎপর রয়েছে। প্রতিনিয়ত অপরাধ নির্মূলের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন এজার জমা নেওয়ার পরে রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কারণে মামলা এন্ট্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ওসি আরো জানান এসপি ফোন পেলেই মামলা এন্ট্রি করা সম্ভব হবে । ইয়াবার আগ্রাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এদের সিন্টিকেট অনেক শক্তিশালী এদের কে গ্রেফতার করলে এখান থেকে চলে যেতে হবে বলে জানান।
এলাকাবাসী আইন শৃংখলা রক্ষায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!